Logo

বিভিন্ন কেন্দ্রে অন্ধকারে মোমবাতির আলোয় হলো এসএসসি পরীক্ষা

আবার কিছু কিছু কেন্দ্রে অন্ধকারেই প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বসে ছিল পরীক্ষার্থীরা। কিছু স্থানে ঝড়-বৃষ্টির কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় পরীক্ষার্থীদের।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারের মধ্যে শিক্ষার্থীরা।

বাংলা ফ্লো প্রতিবেদক

ঢাকা: একদিকে ঝড়-বৃষ্টি আর অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোমবাতির আলোয় কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আবার কিছু কিছু কেন্দ্রে অন্ধকারেই প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বসে ছিল পরীক্ষার্থীরা। কিছু স্থানে ঝড়-বৃষ্টির কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় পরীক্ষার্থীদের।

পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজী দেলওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও গঙ্গাচড়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্ধকারের মধ্যেই তাদের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষার খাতার সামনে বসে থাকা ছাড়া আসলে কিছু করার ছিল না পরীক্ষার্থীদের।

কেন্দ্রের সামনে থাকা উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ থেকে আসা মিজানুর রহমান নামের এক অভিভাবক জানান, আমার ভাগনে পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। বিদ্যুৎ ছিল না ৪০-৫০ মিনিট। আকাশ খারাপ থাকায় অন্ধকার হয়েছিল। সেন্টারে আলাদা করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। তাই অন্ধকারে পরীক্ষা দিচ্ছে তারা। আমরা চাই এটা বিবেচনায় সময় বাড়িয়ে দেওয়া হোক।

গঙ্গাচড়া মধ্যপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। কেন্দ্রগুলোতে আগে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। তাহলে এ সমস্যা হতো না।

হাজী দেলওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে বিকল্প ব্যবস্থা করেছি।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর আওতাধীন গঙ্গাচড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম আইয়ুব আলী বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৩৩ কেভি লাইন ফল্ট করে। আমরা তা তাৎক্ষণিক ঠিক করেছি। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, কেন্দ্রগুলোতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে আগে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা ছিল। আশা করি, পরে আর কোনো সমস্যা হবে না।

পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ এম পি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষার হলে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

জানা গেছে, উপজেলায় সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ের সঙ্গে লোডশেডিং শুরু হয়। পরে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে অন্ধকার কক্ষে শিক্ষার্থীদের মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় বলেন, সকাল থেকে প্রচুর বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে লোডশেডিং শুরু হয়। তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা মোমবাতি জ্বালিয়েছে তারা। তবে আমরা দ্রুত জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষায় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। এ কেন্দ্রে ৯টি বিদ্যালয়ের মোট ৫২১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং শিক্ষার্থীরা খুব সুন্দরভাবেই তাদের প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন করে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পঞ্চগড় সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, আজ সকাল থেকে বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এতে পরীক্ষাকেন্দ্রেও কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে কেন্দ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে জেনারেটর ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এবারের পঞ্চগড় জেলায় এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পর্যায়ের মোট পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ৭৬১ জন।

ঠাকুরগাঁও

ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছানোর পথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কেন্দ্রে প্রবেশ করছে। পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মোমবাতির আলোয় পরীক্ষা দেয় তারা। কেন্দ্রের সচিব জিয়াউর রহমান জানান, ২২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন অনুপস্থিত ছিল।

পাশের গড়েয়া হাইস্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রে ৪৩৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, সেখানে সাতজন অনুপস্থিত ছিল। এখানেও বিদ্যুৎ না থাকায় স্বল্প আলোতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী লামিয়া অভিযোগ করে বলে, ‘হলে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না, তাই সঠিকভাবে লিখতে পারিনি। অনেক পরীক্ষার্থী অন্ধকারে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’

সালান্দর আলিয়া মাদ্রাসা, উত্তর হরিহরপুর আলিম মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে একই অবস্থা দেখা গেছে।

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় ও অন্ধকার পরিবেশে পরীক্ষা চলায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, শহরের একটি ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়ায় প্রথমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল, তবে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো স্থিতিশীল হয়নি, তাই আমরা পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মোমবাতির আলোতে পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম লুৎফুল হাসান সরকার জানান, প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের কিছু লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলেও অনেক জায়গায় তা বন্ধ।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৭ হাজার ৯৭৭ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ হাজার ৮০৮ জন ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৯৩৯ জন শিক্ষার্থী চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts শিক্ষা

Leave a Comment

Comments 0