বাংলাফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই চড়ে যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসলামাবাদ দাবি করেছে, আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা এঁটেছে ভারত। এই খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

যদিও এই দাবির পক্ষে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি পাকিস্তান। ভারত সরকারও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি।

তবে নয়া দিল্লি অভিযোগ করেছে, জম্মু ‍ও কাশ্মীর সীমান্তে গুলি চালিয়ে যুদ্ধের উসকানি দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।

প্রসঙ্গত, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাম শহরের বৈসরণ উপত্যকায় গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসীদের হামলায় এক নেপালিসহ ২৬ পর্যটক নিহত হয়। আহত হয় ১৭ জন।

এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে কড়া জবাবের হুমকি দেয় দিল্লি। অন্যদিকে পহেলগাম হত্যাকাণ্ডে ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানায় ইসলামাবাদ।

সেদিকে কর্ণপাত না করে হামলার একদিন পর সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য বন্ধ করে দেয়।

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রতি রাতেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলি ছুড়ে চলেছে দু’দেশের সেনাবাহিনী। এছাড়া নিরাপত্তা শঙ্কায় ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮৭টি পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টিই বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। 

দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় দিল্লি।

তাদের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার সকালে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে ভারত।

পহেলগামের এই উপত্যকায় ২২ এপ্রিল হত্যাকাণ্ড ঘটে।

তিনি বলেন, “পাকিস্তানের কাছে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, পহেলগাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগকে অজুহাত করে আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত।”

তিনি বলেন, “ভারত নিজেই এই অঞ্চলে বিচারক ও শাস্তিদাতা হিসেবে যে দাম্ভিক ভূমিকা পালন করছে, পাকিস্তান তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একে সম্পূর্ণরূপে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আখ্যা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে এবং এই দুর্যোগের যন্ত্রণা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারে। বিশ্বের যেকোনো স্থানে, যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে আমরা সবসময় ঘৃণাভরে নিন্দা করেছি।

পহেলগামের ঘটনায় ভারতের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে হামলার ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যুক্তির পথ অনুসরণের পরিবর্তে অযৌক্তিকতা ও সংঘাতের এক বিপজ্জনক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত, যার পরিণতি শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, এর বাইরেও ভয়াবহ হবে।

ভারত কোনও ধরনের হামলা করলে তার জবাব ইসলামাবাদ নিশ্চিতভাবেই এবং কঠোরভাবে দেবে বলেও জানান আতাউল্লাহ তারার।

এর আগে সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছিলেন, ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক আগ্রাসন ‘আসন্ন’।

বাংলাফ্লো/এসবি