মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ফ্লাই জোনে’ স্কুল কেন, প্রশ্ন বিআইপি’র

শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বিআইপি’র নিজস্ব কার্যালয় প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা এলাকার ফ্লাই জোনে গড়ে তোলা হয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি গঠনের ক্ষেত্রে নীতিমালা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।

তারা বলছে, এই দুর্ঘটনার দায় থেকে রাজউক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন কেউই মুক্ত নয়।

কারণ হিসাবে তার বলছে, রাজউক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিলেও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। সঠিক নিয়ম মেনে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলে হয়তো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন এমন করুণ পরিণতির শিকার হতো না।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বিআইপি’র নিজস্ব কার্যালয় প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংগঠনের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, ড. মো. শফিক-উর রহমান, সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অগ্নি পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম এবং বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ মো. ফাহিম আবেদীন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনসহ মাইলস্টোন স্কুলের একাধিক ভবন রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। যে ভবনে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি সরাসরি ফ্লাই জোনের আওতাধীন। শুধু তাই নয়, ভবনটিতে জরুরি বের হওয়ার কোনও বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। আশপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের মতো কোনো হাসপাতাল কাছাকাছি ছিল না। যে কটি সাধারণ হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোর দূরত্বও দুই-তিন কিলোমিটার। আর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে।

তিনি আরও বলেন, শুধু মাইলস্টোন নয়, ঢাকার বেশিরভাগ স্কুলেই কোনো সিঁড়ি নেই বা অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার উপযোগী ব্যবস্থা নেই। এটি সাধারণ একটি অগ্নিকাণ্ড হলেও এত প্রাণহানি হতে পারতো। পরিকল্পনাহীন নগরায়নের ফলে শহর তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরে বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠারও দাবি জানান তিনি।

আদিল মুহাম্মদ খান আরও অভিযোগ করেন, ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে কোনও কার্যকর নীতিমালা নেই। মন্ত্রণালয়ের সভাগুলোতে প্ল্যানারদের অন্তর্ভুক্ত না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে দোষারোপ করা হয় পরিকল্পনাবিদদের ওপরও।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ডিয়াবাড়ীর মতো স্পর্শকাতর এলাকায় রূপায়ণ ও প্রিয়াঙ্কা হাউজিং কীভাবে অনুমোদন পেলো? একটি প্রভাবশালী চক্র ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে চলেছে। এই চক্রের নাম প্রকাশ করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও যে অনিয়ম রয়েছে, সেগুলোও প্রকাশ্যে আনার দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় সাংবাদিকরা যদি নির্ধারিত জায়গায় অবস্থান করতে পারতেন, তাহলে এত গুজব ছড়াত না। এছাড়া, জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ফ্লাই জোনের অ্যাপ্রোচ লাইনের মধ্যে থাকা সব ভবন ধাপে ধাপে অপসারণ করারও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0