আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা:পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে পারিবারিক সম্মতির বিরুদ্ধে বিয়ে করার অপরাধে এক নারী ও এক পুরুষকে গুলি করে হত্যা করার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটিকে ‘সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড’ বা ‘অনার কিলিং’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি সোমবার জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার স্থান ও অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। এরপরই গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, মরুভূমির মতো এক নির্জন এলাকায় কিছু পিকআপ ও এসইউভি গাড়ি থেমেছে। যেখান থেকে এক নারী ও এক পুরুষকে নামিয়ে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ওই জায়গায় আনা হয়েছিল হত্যা করার উদ্দেশ্যে।
ভিডিওতে নারীর কণ্ঠও শোনা যায়। যেখানে তিনি একজন পুরুষকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সাত পা হাঁটো, তারপর আমাকে গুলি করো।’ ওই পুরুষ কয়েক কদম তার পেছনেও হাঁটেন। এরপর ওই নারী তার দিকে ঘুরে দাঁড়ান।
এরপর ওই নারীর সঙ্গে থাকা পুরুষ খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করেন।
প্রথম দুটি গুলি শরীরে ঢুকে গেলেও ওই নারী দাঁড়িয়েই ছিলেন, কিন্তু তৃতীয় গুলি লাঘার সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আরো গুলির শব্দ শোনা যায়। ভিডিওতে আরো এক রক্তাক্ত পুরুষকে মাটিতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই নারীর মৃতদেহের কাছাকাছি পড়ে ছিলেন তিনি।
এরপর আরো কয়েকজন পুরুষ এসে উভয় মরদেহের দিকে গুলি ছোড়েন।
একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিডিওতে ওই নারী চিৎকার করেননি বা প্রাণভিক্ষাও চাননি। ব্রাহাভি ভাষায় তিনি বলছিলেন, ‘তুমি আমাকে শুধু গুলি করতে পারো, এর বেশি কিছু না। তবে ‘এর বেশি কিছু না’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। রয়টার্স ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান জানিয়েছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে অন্তত ৪০৫টি সম্মান রক্ষার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডে বেশির ভাগ ভিকটিমই নারী।
মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের বহু রক্ষণশীল পরিবার এখনো প্রেম বা পারিবারিক মতের বিরুদ্ধে বিয়ে মেনে নেয় না। এ কারণে অনেক দম্পতিকে সম্মান রক্ষার নামে হত্যা করা হয়। বেলুচিস্তানের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানে সম্মান রক্ষার নামে চলমান সহিংসতার ভয়াবহ বাস্তবতাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
সূত্র : রয়টার্স
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0