বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: বাংলাদেশ ২০১৮ সালেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে। সে সময় এই ঘোষণা ব্যাপক হারে উদযাপন করে বাংলাদেশ।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে কর্মপরিকল্পনা ছিল, সেখান থেকে সরকার পিছু হটবে না বলে বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার বাজেট বক্তৃতায় তিনি অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সরকারের এই পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বাভাবিক নিয়মে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে আনুষ্ঠানিক উত্তরণের। উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনাসমূহ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হয়েছে।”
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দিন ঠিক করা আছে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে বলেছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিসংখ্যান নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করবে কি না তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ভাবছে’।
এর মধ্যে গত মার্চের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছিলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
তবে ১৩ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় যে ভাবনা ছিল, তা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণর পর বাংলাদেশের যে বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা মোকাবিলায় সরকার কী কী ভাবছে, তাও বাজেট বক্তব্যে তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা।
বাণিজ্যিক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লজিস্টিকস খাতের উন্নয়নসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয় বাজেট বক্তব্যে।
বাণিজ্য সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোটের সাথে বাণিজ্য চুক্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
বিনিয়োগের বাধা চিহ্নিত করে তা দ্রুততম সময়ে দূর করার বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথাও জানানো হয় বাজেট বক্তব্যে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সহজে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টাল হতে বর্তমানে ৪৩টি সংস্থার ১৩৪টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
“পাশাপাশি, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে একটি সিঙ্গেল প্ল্যাটফর্মে আবেদন, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর আওতায় বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইনডো খোলা হয়েছে।”
বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি পাইপলাইন তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। এর এর মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিকে ট্র্যাকিং-এর মাধ্যমে প্রকৃত বিনিয়োগে রূপান্তর করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সুনির্দিষ্টভাবেই বললেন, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন উৎসাহিত করার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও জানানো হয় বাজেট বক্তব্যে।
“এ লক্ষ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তহবিল হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি,” বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় গৃহীত বেশকিছু প্রকল্প বাদ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
“বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস/বৃদ্ধি অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর প্রভাব নিরূপণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলায় বিবেচ্য প্রকল্প কতটুকু সহনশীল তা প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় যাচাই ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।”
আগামী তিন বছরের মধ্যে এ খাতের বিকাশে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতামূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
এজন্য বিভাগীয় শহরে এসএমই প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।
নারী উদ্যোক্তাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ, ডিজিটাল প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে ৩ হাজার নারী উদ্যোক্তার সাথে করপোরেট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাফ্লো/এসও
Comments 0