বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা:সুন্দরবনে ধারাবাহিকভাবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্তির পথে এমন শঙ্কা থেকে বাঘের জন্য বসবাস উপযোগী একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এতে খুব ভালো কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১০ লাখের বেশি বাঘের ছবি আর ভিডিও বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, এখন সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১২৫টি।
২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাঘ রক্ষায় নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও পরিবেশকর্মীদের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদার করতে ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত টাইগার সামিটে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও দিবসটি পালন করে। প্রতি বছরের মতো এবারও বাঘ দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’ এই এবারের প্রতিপাদ্যে নানা কর্মসূচিতে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
বন অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া গেছে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালের তুলনায় ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জরিপে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২ দশমিক ৬৪ পাওয়া গেছে; যা বাঘের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ইঙ্গিত বহন করে। জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। সেখানে ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা বসিয়ে ৩১৮ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিকার প্রতিরোধ, টহল জোরদার, বেড়া স্থাপন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং প্রযুক্তি নির্ভর মনিটরিংয়ের ফলে এ সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থল সংকোচন, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে এই প্রজাতি এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক (সিএফ) ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ আমরা বাঘ সংরক্ষণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরমধ্যে বাঘকে ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে ১২টির মতো মাটির কেল্লা বানানো হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য ৮৪টি পুকুর করা হয়েছে। সাধারণ গ্রামের মানুষ যাতে হুট করে বনে ঢুকতে না পারে, সে জন্য বনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার ফেন্সিং বা বেড়া দেওয়া হয়েছে। বাঘ নিধন বা পোচিং বন্ধে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা বেশ কাজে লাগছে। এদিকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পাশাপাশি মামলা জরিমানাতে বেশ সুফল পাচ্ছি আমরা।
তিনি আরও জানান, বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে; যারা বাঘ ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমাতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সুন্দরবন এলাকার গ্রামগুলোতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের সদস্যদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাঘ আর মানুষের মধ্যের দ্বন্দ্ব নিরসন করে একটি বাঘকে নিরাপদে বনে ফিরে যেতে তারা সহায়তা করে। বাঘ সংরক্ষণে শুধু সরকার নয়, সাধারণ মানুষেরও সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিশ্ব বাঘ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বন ভবনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বন অধিদফতর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0