বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এবারে প্রথম বাজেটে কিছু ভিন্নতা প্রকাশ পেয়েছে। পূর্বে যেখানে প্রতিবার বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেতো, সেখানে এবারের বাজেটের পরিমান হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে বাজেট ঘোষণার পরপরই এই বাজেটকে বাস্তবতাবিবর্জিত বাজেট হিসেবে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই বাজেট রাজস্ব আয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তাহলে কোথা থেকে সরকার পাবে এই অর্থ। একইসাথে কোন কোন খাতে কত কোটি টাকা ব্যয় হবে চলু দেখে নেওয়া যাক।
অর্থ প্রাপ্তির খাত
২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের বড় অংশের জোগান দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোট বাজেটের ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ অর্থের যোগান আসবে এই এনবিআর থেকে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ ভাগ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঘাটতির ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
অর্থ ব্যয়ের খাত
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এবার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর ৫৭ ভাগই যাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ ভাগ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে দেশি বিদেশি সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতেও বড় ব্যয় ধরা হচ্ছে। পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৪০ ভাগ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এই দুই খাতে। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে সরকারের খরচ হবে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এরপর ১৯ শতাংশ ব্যয় হবে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিতে, টাকার অঙ্কে যা ২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বরাদ্দ প্রায় ১২ ভাগ। সরকারি কর্মচারীদের পেনশনে বরাদ্দ সাড়ে ৬ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সাড়ে ৫ ও কৃষি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ ভাগ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর পেনশন ছাড়া এ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিতে নতুন করে ১ লাখ উপকারভোগীকে যুক্ত করা হবে। মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫০ টাকা । বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ নারী ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতা ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতা হার ৬৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৫৫ লাখ পরিবারকে স্বল্প মূল্যে ১০ লাখ টন চাল বিতরণ করবে সরকার।
জিডিপি ও মূল্যস্ফীতি
এবারের বাজেটে জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ ভাগ।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গত এপ্রিলের হিসেবে দেশের বর্তমান সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0