সুদের টাকার জন্য ঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

সুদের টাকার জন্য ঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

এর ফলে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে টানা আট দিন ধরে খোলা বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছেন একরামের পরিবার।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

নোয়াখালী: নোয়াখালীর হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিকশাচালক একরাম হোসেনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা মেরেছেন তোফায়েল আহম্মদ নামের এক সুদ ব্যবসায়ী। এর ফলে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে টানা আট দিন ধরে খোলা বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছেন একরামের পরিবার। স্থানীয়দের কাছে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে চরকিং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, একরামের স্ত্রী ও শাশুড়ি ঘরের বাইরে বসে আছেন। তালাবদ্ধ দুটি ঘরের সামনে ছোট ছোট শিশুরা মশারির নিচে কাঁপতে কাঁপতে বসে ছিল।

স্থানীয়রা জানান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে একরাম তোফায়েলের কাছ থেকে সুদের ওপর টাকা নেন। নিয়মিত কিস্তি দিতে না পারায় তোফায়েল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা মেরে দেন। এরপর থেকেই পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে কাটাচ্ছে দিন।

রিকশাচালক একরাম হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে দুর্ঘটনায় আহত দুইজনের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেই। পরবর্তীতে আরও টাকা নেওয়ায় মোট ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৭১ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। তবুও সুদের ফাঁদে পড়ে জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমাকে কয়েক দফায় মারধর ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন তোফায়েল। সম্প্রতি আমার অনুপস্থিতিতে তোফায়েল ঘরের সব মালামাল বের করে তালা মেরে দিয়েছে। ফলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বারান্দায় রাত কাটাচ্ছি।

একরামের স্ত্রী বলেন, আট দিন ধরে বাচ্চাদের নিয়ে খোলা বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রান্নাবান্না বন্ধ, প্রতিবেশীদের দয়ায় কোনোভাবে দিন পার করছি।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম জানান, টাকার জন্য কারো বসতঘরে তালা মারা চরম অমানবিক কাজ। শিশুরা ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভুগছে, কিন্তু ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের। এ ঘটনা হৃদয়বিদারক।

অভিযুক্ত তোফায়েল আহম্মদ এ বিষয়ে বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপর টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাই আমি তালা দিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে তালা খুলে দেব।

চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সুদের পাওনার জন্য কারো বসতঘরে তালা মারা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি দুইজনের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছি।

বাংলাফ্লো/সিএস