Logo

'শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল রংপুর'

জুলাই আন্দোলনের সময় মুদি দোকানি সমেদ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

রংপুর: জুলাই আন্দোলনের সময় মুদি দোকানি সমেদ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এর ১০ মাস পর করা হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষক মাহমুদুল হকের মুক্তি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও তাকে গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে শিক্ষক মাহমুদুল হকের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সব ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখারও দেন তারা।

এর আগে জুমার নামাজের পর শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। মানববন্ধনে শিক্ষক মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন, বড় ছেলে মাইমুন মেহেরানও অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন- শিক্ষক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ইউসুফ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সোহাগ, সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন আলম, মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন ও তার ছেলে মাইমুন মেহেরানসহ অন্যরা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় ২ আগস্ট রংপুর নগরীর নজিরের হাট এলাকায় জামায়াত নেতা নাছিরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ সেখানে গেলে ওই এলাকায় মুদি দোকানি সমেদ উদ্দিন পুলিশ দেখে ভয়ে দোকান থেকে নেমে পালিয়ে যাব। কিছু দূর দৌড়ে যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানান।

এ ঘটনার ১০ মাস পর পুলিশ সমেদ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে মুদি দোকানদার সমেদ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগমের স্বাক্ষর নিয়ে একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় স্থানীয় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও স্থানীয় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় ৫৪ নম্বর আসামি করা হয় শিক্ষক মাহমুদুল হককে। হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ মুদি দোকানদারের স্ত্রীকে থানায় ডেকে এনে এই মামলা রেকর্ড করেন। তিনি নিজেই তদন্তকারী কর্মকর্তাও হন।

বক্তারা হাট অ্যাটার্কের রোগীকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

শিক্ষক মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে তার স্বামীর মুক্তি দাবি করে বলেন, আমার স্বামী সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই দিনই দায়ী পুলিশ সদস্যসহ সবার শাস্তি দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরাসরি অংশ নেন।

তিনি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন করেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মানে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া? আমার ছেলে আমাকে বার বার জিজ্ঞাসা করছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে যদি গ্রেফতার হতে হয় তা হলে অন্যায় করলে কী হবে? তার এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর আমি দিতে পারি না। তিনি অবিলম্বে স্বামীর মুক্তি দাবি করেন।

শিক্ষক মাহমুদুল হকের বড় ছেলে মাইমুন মেহেরান বলেন, আমার বাবাকে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাজিরহাট থানা পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো। কী অপরাধ করেছে, জানতে চাইলে পুলিশ কোনও জবাব দেয়নি। এরপর সরাসরি আদালতে নিয়ে যায়। বিকাল ৫টার মধ্যে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কেন এত তড়িঘড়ি? যে হত্যা মামলা করা হয়েছে, তিনি তো হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। ১০ মাস পর তাকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানিয়ে হত্যা মামলা নেওয়া হলো। সেই মামলায় ৫৪ জন আসামির মধ্যে আমার বাবা ৫৪ নম্বর আসামি। তাহলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করে আমার বাবাকে গ্রেফতার করলো? এর জবাব কে দেবে প্রশ্ন করেন তিনি।

সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কর্মসূচি ঘোষণার আগে বলেন, মাহমুদুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন গোল্ড মেডেল পাওয়া কৃতি শিক্ষার্থী। তিনি ডেইলি স্টারের মেট্রো এডিটর ছিলেন, ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটসের কর্মকর্তা ছিলেন। তার মতো মেধাবী শিক্ষককে একটি ভুয়া মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। যে মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ঘটনা তার স্ত্রী ও ছেলে স্বীকার করলেও প্রশাসন কেন ১০ মাস পর হত্যা মামলা করিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হলো।

তিনি বলেন, সমেদ উদ্দিনের ময়নাতদন্ত হলো না কেন, ওই রিপোর্ট কোথায়? তদন্ত ছাড়াই কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো, আমরা জানতে চাই। জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ওই দিনই তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। এরপর তার প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। তাকে মিথ্যা, সাজানো মামলায় গ্রেফতার আমরা শিক্ষার্থীরা মানবো না। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে, এরপরও দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সমাবেশ চলা কালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকায় অবস্থান নেয়। তবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

যেভাবে গ্রেফতার করা হয় শিক্ষক মাহমুদুল হককে

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে হাজিরহাট থানা পুলিশ বেরোবির শিক্ষক মাহমুদুল হককে তার রংপুর নগরীর ধাপ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার ভাড়া বাসা থেকে আটক করে নিয়ে সরাসরি আদালতে নেয় পুলিশ। এরপর তাকে নগরীর নজিরেরহাট রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২ আগস্ট পুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় মাটিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে মারা যাওয়া সমেদ উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। এরপর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত ছাড়াই কীভাবে নিশ্চিত হলেন মুদি দোকানদারকে হত্যা করা হয়েছে? কেন কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করে নিশ্চিত হলেন এটি হত্যাকাণ্ড? এমন প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

বাংলাফ্লো/এসকে

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0