রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

লাটভিয়ায় ইসরায়েলি সমর্থকদের বর্ণবাদী তাণ্ডব

২০১৬ সালে অস্ত্র চোরাচালান ও সহিংসতার অভিযোগে ইসরায়েলি পুলিশ এই গোষ্ঠীর ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ৮৯ বছরের ইতিহাসে বেইতার কোনো আরব খেলোয়াড় সই করেনি। ক্লাবটির সমর্থকদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলের ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: লাটভিয়ার রাজধানী রিগায় উয়েফা কনফারেন্স লিগের ম্যাচে আবারও বর্ণবাদী আচরণে বিতর্কের জন্ম দিল ইসরায়েলি ক্লাব বেইতার জেরুজালেমের সমর্থকরা। ম্যাচ শুরুর মাত্র এক মিনিটের মাথায় তারা স্টেডিয়ামে আতশবাজি ও ফ্লেয়ার জ্বালিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।

কালো মুখোশ পরা এক সমর্থক ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক আতশবাজি ছুড়ে দেন, যাতে স্ট্যান্ডে আগুন ধরে যায় এবং কয়েকটি আসন পুড়ে যায়। ঘন কালো ধোঁয়ায় স্কন্টো স্টেডিয়াম ঢেকে গেলে হতভম্ব হয়ে পড়ে স্থানীয় দর্শকরা। স্ট্যান্ডে ঝোলানো ছিল কুখ্যাত ফ্যান গ্রুপ ‘লা ফামিলিয়া’র ব্যানার—যারা আরব-বিরোধী স্লোগান, সহিংসতা এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য কুখ্যাত।

২০১৬ সালে অস্ত্র চোরাচালান ও সহিংসতার অভিযোগে ইসরায়েলি পুলিশ এই গোষ্ঠীর ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ৮৯ বছরের ইতিহাসে বেইতার কোনো আরব খেলোয়াড় সই করেনি। ক্লাবটির সমর্থকদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলের ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও।

গাজা যুদ্ধের কারণে বেইতার বর্তমানে রোমানিয়ায় হোম ম্যাচ খেলছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই বুখারেস্টে দলটির সমর্থকরা রাস্তায় মিছিল করে ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দেয়। বৃহস্পতিবার রিগা এফসির বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারের পরও তারা থামেনি—স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে যানজটে আতশবাজি ফোটাতে থাকে, শেষমেশ লাটভিয়ান পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।

ম্যাচ চলাকালে এক স্থানীয় সমর্থকের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানের জবাবে বেইতার সমর্থকরা চিৎকার করে বলে, ‘প্যালেস্টাইন নিপাত যাক’।

গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) ইসরায়েলি দলগুলোকে ইউরোপীয় ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেও ফিফা এখনও তাদের আবেদন পর্যালোচনা শুরু করেনি। অথচ ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে রুশ দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা।

পিএফএ মুখপাত্র ও নারী দলের সাবেক অধিনায়ক দিমা সাঈদ বলেন, ইউরোপে ইসরায়েলি সমর্থকদের বর্ণবাদী স্লোগান সহ্য করা একজন ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের জন্য মানসিকভাবে কষ্টকর। তার দাবি, গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে ইতোমধ্যেই ২০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। গত বুধবার ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সুলেইমান আল-ওবেইদ।

গত নভেম্বরে নেদারল্যান্ডসে মাকাবি তেল আবিবের সমর্থকরা ম্যাচের আগে ও পরে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, তারা বর্ণবাদী গান গাইছে, ট্যাক্সি ভাঙচুর করছে এবং ফিলিস্তিনি পতাকা পুড়াচ্ছে। ডাচ পুলিশ পরে পাল্টা বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে, আর বিশ্বনেতারা ঘটনাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে অভিহিত করেন।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস রস গ্রিফিন বলেন, “যদি এসব করত ইংলিশ সমর্থকরা, ইউরোপজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠত। কিন্তু ইসরায়েলি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে হঠাৎ তারাই ‘ভুক্তভোগী’ হয়ে যায়। ”

আগামী ১৪ আগস্ট রোমানিয়ায় হবে বেইতার–রিগা এফসির ফিরতি লেগ।

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0