বিনোদন ডেস্ক

ঢাকা: প্লেটোনিক ভালোবাসা (Platonic Love) হলো সেই শুদ্ধতম ভালোবাসা, যেখানে কামনা-বাসনার কোনো স্থান নেই। এটি সাধারণ বন্ধুত্বের চেয়ে গভীর, কিন্তু রোমান্টিক ভালোবাসার মতো নয়। এই ভালোবাসা আত্মিক, যেখানে সম্পর্ক গড়ে ওঠে শ্রদ্ধা, মমতা ও মানসিক সংযোগের উপর ভিত্তি করে।

দার্শনিক প্লেটোর নাম থেকেই এই ভালোবাসার ধারণার উৎপত্তি, যদিও প্লেটো নিজে কখনো \প্লেটোনিক লাভ\ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেননি। তাঁর দর্শন অনুসারে, এটি এমন এক ভালোবাসা—যা দুটি প্রেমাসক্ত মানুষকে দৈহিক আকর্ষণ ছাড়িয়ে আত্মিক বন্ধনে নিয়ে যায় এবং সেই বন্ধন প্রেমের সর্বোচ্চ রূপে পরিণত হয়।

এই প্রেমের রয়েছে দারুণ দর্শন-

প্লেটোর মতে, প্রকৃত ভালোবাসা হলো এমন এক আকর্ষণ যা শরীর নয়, আত্মা ও বুদ্ধিকে কেন্দ্র করে। প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ \সিম্পোজিয়াম\-এ এই ভালোবাসার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি অপরজনের মনের ও আত্মার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে একটি ঐশ্বরিক ভালোবাসার দিকে ধাবিত হয়।

সক্রেটিস এই দর্শনকে আরো গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেন প্রোফেট ডিওটিমার কথার মাধ্যমে। ডিওটিমা বলেন, ভালোবাসা হলো একটি মই বা সিঁড়ি—যার ধাপে ধাপে একজন মানুষ দৈহিক আকর্ষণ ছাড়িয়ে সত্যিকারের সৌন্দর্য ও সত্যের দিকে এগিয়ে যায়। এই মইয়ের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছেই আত্মিক ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পায়। এই ভালোবাসা তখন হয়ে ওঠে একধরনের দৈব প্রেম—যেখানে আত্মা আর আত্মার মিলন ঘটে।

অ্যারিস্টটল প্লেটোর এই ভাবনাকে খানিকটা রূপান্তর করে বলেন, সর্বোচ্চ প্রেম সেই, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যৌনতা অনুপস্থিত। এটি একধরনের Friendly Love, যেখানে কেবলই হৃদয়ের বন্ধন থাকে, কোনো শরীরী টান নয়।

প্লেটোনিক ভালোবাসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ এবং চাহিদাহীন। এ ভালোবাসা কেবলই বিলিয়ে দেয়, কিছু গ্রহণ করে না। এই প্রেমের জন্য অনেক সময় দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও মানসিক যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়, কিন্তু তার গভীরতা অটুট থাকে।

প্লেটোনিক প্রেম হলো প্রেমের সর্বোচ্চ ধাপ—যেখানে ভালোবাসা মানে শুধু অনুভব, অনুভব মানেই আত্মার সংযোগ। যেখানে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই প্রেম পূর্ণতা পায়। এ প্রেম চিরন্তন, নিঃশর্ত, এবং গভীরতম।এ এক প্রেম—যা আপনাকে শেখায় কাউকে ভালোবাসা মানেই তার পাশে থাকা নয়, বরং তার আত্মাকে ভালোবাসা; তার চিন্তাকে শ্রদ্ধা করা; এবং তার অস্তিত্বের সঙ্গে নিঃশব্দে একাত্ম হওয়া।

এই প্রেমে থাকে না প্রতারণার ভয়, মানসিক চাহিদার চাপ কিংবা সামাজিক প্রদর্শন। নেই কোনো \ভালোবাসা দিবস\ বা বাহ্যিক উদযাপন। আছে শুধু আত্মিক শান্তি, শ্রদ্ধা, এবং এক টুকরো নিরাপত্তা।

বাংলাফ্লো/আফি