স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: মাত্র এক সিরিজ আগেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হতাশাজনক পারফরম্যান্স করেছিলে লিটন দাসরা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে ফিরতে হয়েছিল দেশে। তবে এবার ঘরের মাঠে, পরিচিত কন্ডিশনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। রবিবার (২০ জুলাই) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হলো তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ২৩বার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২২ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে, বাকি ১৯ ম্যাচে জয়ী দলের নাম পাকিস্তান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হিসেবেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সাফল্য নেই বললেই চলে। ছয়টি সিরিজের মধ্যে পাঁচটিই জিতেছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র একটি সিরিজে। তবে স্বস্তির জায়গা একটাই- ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিও ২০১৫ সালে এক ম্যাচের সিরিজে। এরপর ঘরের মাঠেই আরও দুটি সিরিজে হারতে হয়েছে। সময়ের হিসেবে প্রায় ৯ বছর কুড়ি ওভারের ম্যাচ জেতে না বাংলাদেশ। আজ বদলে গেল সেই হিসেব। ৯ বছর পর নিজেদের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি জিতলো টাইগাররা।
ম্যাচের আগে উইকেট নিয়ে বেশ কথা হয়েছে। মিরপুরের উইকেট কি বোলারদের দিকেই ঝুঁকবে নাকি ব্যাটাররাও কিছু সুবিধা পাবেন- তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক। শেষ পর্যন্ত মিরপুরের উইকেট বোলারদের দিকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই সহায়তার সুফল দুহাতে আদায় করে নিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। নিয়ন্ত্রিত বোলিংকে পাকিস্তানকে ১১০ রানেই থামিয়ে দিয়েছেন তারা।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান লিটন দাস। ৯ ম্যাচ পর টসভাগ্য পক্ষে এসেছে তার। আর টস জিতে তার নেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেছেন বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার সাইম আইয়ুবকে (৬) মোস্তাফিজের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তাসকিন। পাকিস্তানের ছন্দপতনের শুরু সেখানেই। পাওয়ার প্লে'র মধ্যে ৪ উইকেট খুইয়ে ৪১ রান তুলতে সমর্থ হয় সফরকারীরা।
তাসকিন-তানজিমদের দাপুটে বোলিংয়ে পাকিস্তানের প্রথম ৬ ব্যাটারের মধ্যে পাঁচজনই ফিরেছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এর মধ্যে দুই অঙ্ক ছোঁয়া একমাত্র ব্যাটার ওপেনার ফখর জামান করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান। অবশ্য ইনিংসের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রানেই জীবন পেয়েছিলেন তিনি। শেখ মেহেদীর বলে তিনি ক্যাচ তুলে দিলেও তা হাতে জমাতে পারেননি তাসকিন।
শেষ পর্যন্ত খুশদিল শাহর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে যান তিনি।
পরের ব্যাটারদের মধ্যে ৩ ছক্কায় ২২ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের সংগ্রহকে কোনো মতে একশ পার করান আব্বাস আফ্রিদি।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। ৪ ওভার বল করে স্রেফ ৬ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন এই বাঁহাতি পেসার। তবে ২২ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট গেছে তাসকিনের ঝুলিতেও। একটি করে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও শেখ মেহেদী।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২০ বলে ১১১ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ৭ রানে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের পর অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেই অবস্থা থেকে দলকে খেলায় ফেরান তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় উইকেটে তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয় দেখছে বাংলাদেশ।
তারা ইতোমধ্যে ৫৩ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েছেন। তাদের ব্যাটেই জয় দেখছে বাংলাদেশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২ ওভারের খেলা শেষে ৮০ রান। ৩৬ ও ৪০ রানে ব্যাট করছেন তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। জয়ের জন্য ৪৮ বলে প্রয়োজন আর মাত্র ৩১ রান।
রোববার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ওপেনার ফখর জামান। এছাড়া ২২ রান করেন আব্বাস আফ্রিদি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ৩.৩ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দেশি ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড গড়েন মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ ১২০ বলে মাত্র ১১১ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম পাকিস্তানি বাঁহাতি পেসার সালাম মিরাজের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন। তার আগে মাত্র ৪ বলে ১ রান করার সুযোগ পান তানজিদ।
তানজিদ আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঁহাতি পেসার সালাম মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তিনিও তানজিদের মতো ৪ বলে মাত্র ১ রানে ফেরেন।
লিটনের বিদায়ে ২.২ ওভারে মাত্র ৭ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন।
তাওহীদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমনের ৭৩ রানের জুটি ভেঙে গেলো। আব্বাস আফ্রিদির বলে বোল্ড হলেন হৃদয়। ৩৬ রান করেন তিনি। ৩৭ বলে ২ চার ও ২ ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। ১২.৩ ওভারে ৮০ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
তবে আরেক প্রান্তে শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন ইমন। লঙ্কানদের বিপক্ষে তানজিদের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ছক্কার ফুলঝুড়ি ছোটান তিনি। ৩৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। দলকে জিতিয়ে তিনি যখন ফিরছেন নামের পাশে ৩৯ বলে ৫৬ রান। ইনিংসে চার ৩টি, ছক্কা ৫টি। জাকের আলী অনিক অপরাজিত ছিলেন ১০ বলে ১৫ রানে।
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0