রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

হাসিনা-আসাদুজ্জামানের নির্দেশেই হত্যাযজ্ঞ: রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি

সকালে তাকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। এরপর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে তিনি জবানবন্দি দেন।

ফাইল ছবি

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে জুলাই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছেন মামলার রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে তিনি এ তথ্য দেন।

সকালে তাকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। এরপর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে তিনি জবানবন্দি দেন।

সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা সরাসরি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রায় প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় বৈঠক করতেন। এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ অনেকে। এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় এ কর্মকর্তারা চেইন অব কমান্ড মানতেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজস্ব বলয়ের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দেওয়া এবং ঢাকায় স্থায়ী রাখা। র‍্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় টিএফআই সেলসহ বিভিন্ন বন্দিশালার বর্ণনাও দেন তিনি।

মামুন জবানবন্দিতে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি প্রায় সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু চাকরির শেষ পর্যায়ে এসব কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি গণহত্যার শিকার প্রতিটি পরিবারের আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী ও আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আজ আমার দেওয়া বর্ণনা থেকে সত্য উদঘাটন হলে, আল্লাহ যদি আমাকে হায়াত দান করেন, তাহলে বাকি জীবনটায় কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।”

এসময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন আংশিক জেরা করেন তাকে।

উল্লেখ্য, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞের নানা বর্ণনা উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় দায়ী করে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এর আগে গত ১০ জুলাই ছাত্র-আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন একই সাবেক আইজিপি মামুন। সেদিন তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ সত্য এবং তিনি রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে অপরাধের বিস্তারিত তুলে ধরতে চান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগপত্রের মোট আয়তন আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা, যেখানে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদ তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মামলায় সাক্ষী রয়েছেন মোট ৮১ জন।

বাংলাফ্লো/সিএস


Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0