Logo

স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল হলেও বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি

গত ৫ মে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই কমিটি তাদের সুপারিশমালাও দাখিল করা হয়েছে।

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: আগামী ১ জুলাই থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে সরকার। সরকার সংশ্লিষ্টদের পক্ষথেকে এমন তথ্য জানানো হলেও তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

দেশের স্বাস্থ্যখাতের নানামুখী সমস্যা দূর করতে ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ মে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই কমিটি তাদের সুপারিশমালাও দাখিল করা হয়েছে।

জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতিকে প্রধান করে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিশনের সদস্যরা প্রায় দুই মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলোর কর্মপরিবেশ ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা করে ৫৫টি সুপারিশ প্রণয়ন করে।

এরপর ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কোনো ঘোষণা বা অগ্রগতির তথ্য জানানো হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংস্কার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন স্থগিত থাকলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় কিছু কিছু বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।এর আগে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বহাল থাকবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ: যা ছিল কমিশনের প্রস্তাবে

বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসকদের নিয়ে গঠিত এ কমিশন প্রায় দুই মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলোর কর্মপরিবেশ ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা করে ৫৫টি সুপারিশ প্রণয়ন করে।

প্রধান প্রধান সুপারিশ

উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ ‘ফ্যামিলি কেয়ার ইউনিট’ চালু, জেলা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতি রোধে ‘ন্যাশনাল ই-প্রোকিওরমেন্ট সিস্টেম’ প্রবর্তন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মান নিয়ন্ত্রণে আইনি কাঠামো ও ‘লাইসেন্স অডিট সেল’ গঠন, মেডিকেল ও নার্সিং শিক্ষায় পাঠ্যসূচি হালনাগাদ ও দক্ষতা-ভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু ইত্যাদি।

প্রতিবেদন জমার পর যা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা

গত ৫ মে কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন। পরে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এখনই মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, একটি বড় সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসক সংকট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসক থাকলেও যেখানে দরকার সেখানে নেই। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ওই সময় আরও বলেন, এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। পরে প্রধান উপদেষ্টা তাদের কাছে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটির সারাংশ ১০০ পৃষ্ঠার মধ্যে তৈরি করে দিতে বলেছিলেন। এরই মধ্যে সে কাজটিও সম্পন্ন করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। এক্ষেত্রে কমিশনের আর কোনো কাজ নেই।

সুপারিশ বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ১ জুলাই থেকেই স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রধানত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিনটি উপায়ে সংস্কার কাজ চলবে। প্রথমত আইনের সংস্কার, দ্বিতীয়ত ব্যবস্থাপনাগত সংস্কার ও তৃতীয় তো সেবার মান বাড়ানো।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ ২৭ বছর পর অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বন্ধ করে বিপুল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয়ের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন অনুপাতে (নিড বেইজড) অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটি বিরাট পরিবর্তন বলে তিনি মনে করছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ৬ থেকে ১০টি সংশোধন/প্রবর্তন করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাফ্লো/এনআর

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0