বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি ভঙ্গ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনা সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারী প্রার্থী বা তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসাররা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বা স্বপ্রণোদিত হয়েও ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমাদানের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। এসময় প্রার্থী বা তার সমর্থকদের কার্যক্রমে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা ছাত্র সংগঠনের বাধা সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একই নিয়ম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
নির্বাচনী প্রচারণা
প্রচারণা চালানো যাবে প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিন থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে প্রচারণা সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে রাত ১০টার পর মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ।
সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে।
ক্যাম্পাস ও হলের নির্ধারিত স্থানে কেবল সভা বা সমাবেশ করা যাবে। সড়ক, শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, পরীক্ষার হল কিংবা উপাসনালয়ে কোনো প্রচারণা চলবে না।
প্রতিটি হলে একটি ও পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ তিনটি প্রজেকশন মিটিং আয়োজন করা যাবে।
প্রচারণায় গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করলে রিটার্নিং অফিসার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
যানবাহন ব্যবহার ও শোডাউন
নির্বাচনের কোনো পর্যায়েই গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা বা অন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করে শোডাউন বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। ভোটের দিন প্রার্থীরা ভোটার পরিবহনের জন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ভোটাররা সাইকেল বা রিকশায় কেন্দ্রে আসতে পারবেন। সেদিন শুধু রিটার্নিং অফিসারের স্টিকারযুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে, যা প্রক্টর অফিস তত্ত্বাবধান করবে।
পোস্টার, লিফলেট ও অনলাইন প্রচার
শুধু সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহার করা যাবে, যেখানে কেবল প্রার্থীর নিজের সাদাকালো ছবি থাকবে।
অন্য কারো ছবি, প্রতীক, দেয়াল, যানবাহন, গাছ বা স্থাপনায় প্রচারসামগ্রী লাগানো যাবে না।
প্রতিপক্ষের প্রচার সামগ্রী নষ্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অনলাইনে প্রচার চালানো যাবে, তবে গুজব, মানহানি, চরিত্রহনন বা অসত্য তথ্য প্রচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বা গ্রুপ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিধিনিষেধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ
নির্বাচনী প্রচারণায় উসকানিমূলক, মানহানিকর বা সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
কোনো প্রার্থী বা সংগঠনকে লক্ষ্য করে আর্থিক লেনদেন, অনুদান বা চাঁদা দেওয়া-নেওয়া যাবে না।
ভোটারদের খাদ্য, পানীয় বা উপহার দেওয়া যাবে না।
প্রার্থীর ছবি বা বক্তব্যযুক্ত কোনো পোশাক (টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি) পরিধান করা নিষিদ্ধ।
নির্বাচনী প্রচার বা ভোট চলাকালীন বিস্ফোরক দ্রব্য, লাঠি, রড, আগ্নেয়াস্ত্র বা যেকোনো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যতীত অন্য কেউ অস্ত্র বহন করতে পারবে না।
ভোটকেন্দ্রের নিয়মাবলি
ভোটারদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
ভোট দেওয়ার পর কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, কেন্দ্রের ভেতরে অকারণে ভিড় করা যাবে না।
নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রার্থী ও অনুমোদিত ব্যক্তিদের বাইরে কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
সাংবাদিকরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রের ছবি তুলতে পারবেন, তবে গোপন কক্ষে ঢোকা যাবে না।
ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ও সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখতে হবে।
বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
ভোটের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভোটার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত কোনো বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0