বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,
ঢাকা: সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রমে লন্ডন বৈঠকের কোনো প্রতিফলন না দেখতে পেয়ে বিএনপিতে দেখা দিয়েছে সন্দেহ ও সংশয়ের ঘনঘটা।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিসহ কিছু নতুন ইস্যু সামনে এনে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ ও প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিষয়ে যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, বাস্তবে এখনো তার কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, ইসির কার্যক্রমে লন্ডন বৈঠকের প্রতিফলন অনুপস্থিত। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবি সামনে আনার ঘটনাকে ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল’ হিসেবে দেখছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপি নেতারা মনে করেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি দল। এ প্রেক্ষাপটে গত ২৬ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশা করেছিলেন, এই বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা দিকনির্দেশনা আসবে, তবে সরকারি ভাষ্যে তা শুধুই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’। এ বিষয়ে ইসিও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক রোডম্যাপ বা স্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না দেখা যাওয়ার মধ্যে কয়েকটি দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি ক্রমশই রাজনীতির মাঠ ঘোলাটে করছে। এতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি এক নেতা বলেন, পিআর পদ্ধতি আসলে কী? কেন এই পদ্ধতিকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিচ্ছে? কিংবা কেন নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়েই সৃষ্টি হচ্ছে অনিশ্চয়তা? বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবেই কি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে অন্যান্য দলগুলো—এসব বিষয়ে চলছে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পিআর পদ্ধতিতে মূলত আসনভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে না। ভোটাররা সরাসরি কোনো প্রার্থীকে নয়, ভোট দেন রাজনৈতিক দলকে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে জাতীয় সংসদে তাদের আসন বরাদ্দ হয়। বিশ্বের প্রায় ৯১টি দেশে এ ধরনের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। আবার কিছু দেশে সরাসরি ভোট ও অনুপাতিক পদ্ধতির সমন্বয়ে মিশ্র পদ্ধতি চালু রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও পদ্ধতির মূল ধারণা একই, বাস্তবে দেশ ভেদে এর প্রয়োগে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। অনেক দেশে দলভিত্তিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা থেকেই সংসদ নির্বাচন করা হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি নয়, বরং রাজনৈতিক দলই হয় মূল প্রতিযোগী।
সহজ ভাষায় বললে, এ পদ্ধতিতে ভোটের হারই নির্ধারণ করে আসনের সংখ্যা। যেমন, বাংলাদেশে যদি কোনো দল মোট গৃহীত ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দ হবে ৩০টি আসন। ১ শতাংশ ভোট পেলে আসন পাবে ৩টি। এই বাস্তবতা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর কিংবা গ্রহণযোগ্য?
বিএনপি ও সমমনা ছয়টি দল ও জোট এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, এ পদ্ধতিতে নির্বাচন ও আসন বণ্টনের দাবিতে সরব জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যদিও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ এবং এবি পার্টি সরাসরি এই পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নেয়নি, তবু এই দাবিকে তারা প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে আসছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে ভোটভিত্তিক আসন বণ্টনের প্রস্তাবে বিএনপিকে সম্মত করাতে এই দাবিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0