জেলা প্রতিনিধি
ফরিদপুর: জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এখন তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি, সংসারের হাল ধরতে হাটে সবজি বিক্রি করেন। তিনি ফরিদপুরের অদম্য তরুণ জসিম মাতুব্বর। জীবনের সব প্রতিকূলতাকে জয় করলেও, এখন তিনি আটকে গেছেন সামান্য একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কাছে। হাত না থাকায় আঙুলের ছাপ দিতে পারছেন না, আর এই কারণেই গত তিন বছর ধরে ঘুরেও তিনি পাচ্ছেন না তাঁর নাগরিক অধিকারের এই স্বীকৃতি।
জসিম মাতুব্বর বলেন, “আমার দুটি হাত নেই, পা দিয়ে লিখে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছি। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নির্বাচন কমিশন অফিসে অনেকবার আবেদন করেছি। কিন্তু হাত নেই বলে আঙুলের ছাপ দিতে পারছি না। এই কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র হচ্ছে না।”
এনআইডি কার্ড না থাকায়, তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাঁর জীবন সংগ্রামকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এই অদম্য তরুণের ভোগান্তির খবরটি প্রশাসনের নজরে আসার পর, অবশেষে সমাধানের আশ্বাস মিলেছে।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাওন সাগর বলেন, “আমি জসিমের সমস্যা সম্পর্কে জানি এবং এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।”
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন বলেন, “যাদের দুই হাত নেই, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমি সে ব্যবস্থা করে রেখেছি। জসিম মাতুব্বরকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদে এলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, “পা দিয়ে লিখে এগিয়ে যাওয়া জসিমের গল্প অনেকের কাছে প্রেরণার। প্রশাসন তাকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দিক, এটা পেলে জসিম একজন নাগরিক হিসেবে সকল ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পাবে।”
সকলের সহযোগিতায়, জসিম এখন আশায় বুক বেঁধেছেন, খুব শিগগিরই হয়তো তাঁর হাতের বদলে, পায়ের ছাপেই তৈরি হবে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র।
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0