Logo

কান্নাভেজা বিদায়ে অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড বললেন, ‘জীবনের সেরা দিন’

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও গোট ফুটবল বিশ্ব জেনে গেছে, তার নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: দ্বিতীয়ার্ধে যখন মাঠে নামলেন ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড, তার বুকে তখন দুরু দুরু। মনে শঙ্কার ছায়া, কেমন হবে সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া! নাহ, এবার আর দুয়ো দেওয়া হলো না তাকে। বরং তুমুল উল্লাসে দারুণ অভিবাদন পেলেন তিনি। ম্যাচ শেষেও সিক্ত হলেন সমর্থকদের ভালোবাসায়। আপ্লুত লিভারপুল তারকা আবেগময় কণ্ঠে বললেন, তার জীবনের সেরা দিন এটিই।

শঙ্কার কারণটি ছিল ঘরের মাঠে আগের ম্যাচটির তেতো অভিজ্ঞতা। কিছুদিন আগেই ২৬ বছর বয়সী তারকা ঘোষণা দেন, মৌসুম শেষে ছেড়ে যাবেন লিভারপুল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও গোট ফুটবল বিশ্ব জেনে গেছে, তার নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুল ছেড়ে যাওয়া, সেটিও ফ্রি এজেন্ট হিসেবে, সমর্থকদের একটি অংশ তা মেনে নিতে পারেননি। গত ১১ মে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে দুয়ো দেওয়া হয় তাকে।

যে ক্লাবে তিনি পা রেখেছিলেন ৬ বছর বয়সে, একাডেমি থেকে যুব দল হয়ে মূল দলে খেলে হয়ে উঠেছেন ক্লাবের অপরিহার্য অংশ, যে ক্লাবতার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবটুকু, যে আঙিনার প্রিয় সন্তান তিনি, সেখানেই এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। সতীর্থ মোহামেদ সালাহ, অ্যান্ডি রবার্টসন, সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ এবং আরও অনেকেই তীব্র সমালোচনা করেন সমর্থকদের এমন আচরণের।

সেই ম্যাচের পর আবার অ্যানফিল্ডে খেলতে নামেন তিনি রোববার। মৌসুমের শেষ ম্যাচ, লিভারপুলের জার্সিতে অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের শেষ ম্যাচও। ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র হয় ১-১ গোলে। তবে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছে অনেক আগেই।

এ দিন ছিল ট্রফি নিয়ে শিরোপা উল্লাসের পালা। অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নলল্ডের জন্য ছিল বিদায়ের উপলক্ষ। দর্শকেরা দারুণভাবেই বিদায় জানান তাকে। মাঠে নামার সময় থেকে শুরু করে যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, যখন বল পেয়েছেন, ম্যাচের পর পদক দেওয়ার সময়, সবটুকু সময়ই উল্লাসধ্বনিতে তাকে শুভেচ্ছা জানান সমর্থকেরা।

দর্শকদের এমন ভালোবাসায়তার চোখেও নামে প্লাবন। আগের অভিজ্ঞতার কারণে কিছুটা শঙ্কা তার ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত যা হলো, তাতে তার হৃদয় ভরে গেছে ভালো লাগায়।

“জানতাম না, কী অপেক্ষা করছে আমার জন্য। হ্যাঁ, আসলেই জানতাম না, কয়েক সপ্তাহ আগে যা হলো, এরপর আজকে অ্যানফিল্ডে কী পেতে পারি, তবে ক্লাবের হয়ে আর একটি বার খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। কোচকে তা বলেছিলাম এবং তিনি ভরসা রেখেছে মাঝবিরতির পর। মাঠে নামার সময় সে অভ্যর্থনা পেয়েছি, এটির মূল্য আমার কাছে যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি।”

“এই ক্লাবের হয়ে শতশত ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু আজকের মতো এতটা ভালোবাসা ও আদর আগে অনুভব করিনি কখনও। হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করেছি এবং আশা করি, ক্লাবের ভক্ত-সমর্থকেরা একদিন অনুভব করবে ও স্বীকৃতি দেবে, এই ক্লাবের হয়ে কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং কত কিছু করেছি। এমন কোনো দিন নেই, একটা মিনিট কিংবা একটা সেকেন্ড নেই যে দলের কথা ভাবিনি।”

দুটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, একটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এফএ কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপসহ মোট আটটি শিরোপা জিতে লিভারপুল ছাড়ছেন তিনি। বিদায়বেলায় পেছনে ফিরে তাকিয়ে গর্বই অনুভব করছেন।

“৬ বছর বয়স থেকে ২৬ বছর… ২০ বছর হয়ে গেছে এখানে, অনেক অনেক লম্বা সময়। প্রতিটি মিনিট উপভোগ করেছি ও ভালোবেসেছি। উত্থান-পতন, একাডেমি থেকে উঠে আসা, মূল দলে জায়গা করে নেওয়া, মূল দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠা… এই ক্লাবের একজন হতে পারাই বড় সম্মান ও প্রাপ্তি।”

এখনও পর্যন্ত তার জীবন পুরোপুরিই ছিল লিভারপুলময়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, পরের মৌসুমে যে আর ফিরবেন না, এটা কি এখনও পর্যন্ত হজম করতে পেরেছেন?

“নাহ, কারণ আজীবন তো এটাই করেছি! কখনও কখনও নিজেরই মনে হয়, ‘হ্যাঁ, পরের মৌসুমে ফিরব’, এরপর আবার খেয়াল হয়, ‘নাহ, টি তো হওয়ার নয়, বদলে গেছে সব।”

“তবে মুহূর্তগুলি আমি সবসময় মনে রাখব, বিশেষ করে আজকের মতো দিন। আমার জীবনের সেরা দিন হয়ে থাকবে এটি। খুবই খুবই স্পেশাল দিন এবং দলের জন্য, ক্লাবের জন্য বিশেষ অর্জন।”

বাংলাফ্লো/এসও

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0