স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: একেই বোধ হয় বলে রুদ্ধশ্বাস ফুটবল ম্যাচ যেখানে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই নিশ্চিত না। একেই বোধ হয় বলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লীগের উত্তেজনা যেখানে দুর্দান্ত খেলার পরেও এক পক্ষকে হার মানতে হয়।
মঙ্গলবার (৬ মে) তেমনই এক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো ইন্টার মিলানের ঘরের মাঠ সানসিরোতে।
প্রতিপক্ষ বার্সেলোনাকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে যারা পৌঁছে গেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের ফাইনালে। দুই লেগ মিলিয়ে ইনজাঘির ইন্টার মিলান ৭-৬ গোলে হারালো হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনাকে।
নানা নাটকীয়তার ম্যাচে যেখানে ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছিল খেলার মোড় সেখানে শেষ বাঁশি বাজার পরে ইন্টার মিলানের খেলোয়াড়রা যখন উল্লাসে মেতে উঠেছিল তখন ফাইনালের কাছে এসেও হার মানার বেদনায় বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা ছিল বিমর্ষ।
নানা নাটকীয়তার ম্যাচে বার্সেলোনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে মিউনিখের ফাইনালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফাইনালে প্রথম দল হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলো ইন্টার মিলান।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের মধ্যে হওয়া চ্যাম্পিয়ন লীগের প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে ৩-৩ গোলে ড্র করে ইন্টার মিলান।
তবে প্রথম লেগের খেলা যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় লেগের খেলা।
মঙ্গলবার রাতে ঘরের মাঠ সান সিরোতে সেমিফাইনালের রোমাঞ্চকর ফিরতি লেগে ৪-৩ গোলে জিতেছে ইন্টার। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে তারা।
খেলার শুরু থেকে বার্সেলোনা আক্রমণ করে খেললেও কাউন্টার অ্যাটাকে তাদের বিব্রত করছিল ইন্টার মিলানের খেলোয়াড়রা। জমাট ডিফেন্সে বার্সেলোনার লামিন ইয়ামালদের থামিয়ে প্রতি আক্রমণই যে ছিল তাদের কৌশল।
আর এই কৌশল কাজেও দেয়। যার ফলে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলেই এগিয়ে যায় ইন্টার মিলান।
প্রথমার্ধে মাত্র তিনটি শট লক্ষ্যে রাখতে পারলেও এর মাঝে দুইটিতেই গোল করে ইন্টার মিলান। অবশ্য এই অর্ধে কেবল একটি শটই লক্ষ্যে ছিল বার্সেলোনারও। ১৫তম মিনিটে পেদ্রির কাছ থেকে বল পেয়ে লামিন ইয়ামালের নেওয়া শট অবশ্য ছিল দুর্বল। তা সহজেই আটকান গোলরক্ষক ইয়ান সোমার।
এর মাঝে ম্যাচের ২১ তম মিনিটে প্রথম গোল করে ইন্টার মিলান।
বার্সেলোনার দানি অলমোর অসাবধানতায় বল কেড়ে রক্ষণচেরা পাস দেন ফেদেরিকো দিমার্কো। নিজে শট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ডেনজেল ডামফ্রিস ডি-বক্সে খুঁজে নেন ফাঁকায় থাকা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে। ততক্ষণে গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি। একদম খালি থাকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে নেরাজ্জুরিরা। ডি-বক্সে লাউতারোকে ট্যাকল করতে গিয়ে ফাউল করে বসেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার পাউ কুবারসি। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে স্পট-কিকের বাঁশি বাজান রেফারি। স্ট্যান্সনিকে উল্টো দিকে ছিটকে গিয়ে ১২ গজ দূর থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তুর্কি মিডফিল্ডার চালহানোলু।
বিরতির পরও বল দখলে রেখে খেলতে থাকে সফরকারীরা। সেইসঙ্গে ম্যাচে ফিরতে আক্রমণের ধার বাড়ায় তারা। ফল আসতে সময় লাগেনি বেশিক্ষণ। দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে বামপ্রান্ত থেকে জেরার্দ মার্তিনের ক্রসে দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার গার্সিয়া।
দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণে এই দুই ফুলব্যাকের সমন্বয়ে ৫৭তম মিনিটে সমতা প্রায় টেনেই ফেলেছিল বার্সা। কিন্তু এই দফায় পারেননি গার্সিয়া। মার্তিনের কাছ থেকে বল পেয়ে মাত্র ছয় গজ দূর থেকেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি তিনি। সোমার দক্ষতার ছাপ রেখে ফিরিয়ে দেন তার প্রচেষ্টা। হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গার্সিয়া।
তিন মিনিটের মধ্যেই সমতা ফেরে খেলায়। মার্তিন আরেকটি বিপজ্জনক ক্রস ফেলেন ডি-বক্সে। ছুটে এসে হেড করে নিশানা ভেদ করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার অলমো।
৬৯তম মিনিটে বার্সার পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। তবে ভিএআরের সাহায্য নিলে দেখা যায়, ইয়ামাল ডি-বক্সের সামান্য বাইরে হেনরিখ মিখিতারিয়ানের ফাউলের শিকার হয়েছিলেন। তাই আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়া হয় ফ্রি-কিক।
আট মিনিট পর ফের সুইস গোলরক্ষক সোমারকে মঞ্চে আবির্ভূত হতে হয়। দূরের পোস্টে নেওয়া ইয়ামালের শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন তিনি। তবে মিনিট দশেক পর আর সম্ভব হয়নি। ৮৭তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে এগিয়ে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে যায় বার্সেলোনা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের প্রথম শট সোমার ঠেকানোর পর আলগা বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে পাঠান তিনি।
যোগ করা পাঁচ মিনিটের দ্বিতীয় মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় ইন্টার। ডানপ্রান্ত থেকে ইয়ামালের শট বাধা পায় পোস্টে। আর পরের মিনিটেই স্বাগতিকরা স্কোরলাইন ৩-৩ করে স্তব্ধ করে দেয় বার্সাকে। দুই লেগেই অসাধারণ পারফর্ম করা ডামফ্রিসের ক্রসে নিশানা ভেদ করেন ফ্রান্সেসকো আচেরবি। জার্সি খুলে বুনো উল্লাসে মাতেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তের এই গোলের পর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের নবম মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন বদলি নামা ইতালিয়ান মিডফিল্ডার দাভিদে ফ্রাত্তেসি।
খেলার ৯৯তম মিনিটে মার্কাস থুরাম ডি-বক্সে বল দখলে রেখে বার্সার দুই খেলোয়াড়ের চাপ সামলে ডানপ্রান্ত থেকে খুঁজে নেন বদলি মেহদি তারেমিকে। ইরানি স্ট্রাইকার ছোট পাস বাড়ান আরেক বদলি ফ্রাত্তেসির উদ্দেশ্যে। একটু থেমে বাঁ পায়ের কোণাকুণি শটে পোলিশ গোলরক্ষক স্ট্যান্সনিকে ফাঁকি দেন তিনি। এরপর গ্যালারিতে উপস্থিত ভক্তদের কাছে গিয়ে করেন উদযাপন।
ইন্টার মিলান এগিয়ে যায় ৪-৩ গোলে। এরপরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ইয়ান সোমারকে আর পরাস্ত করতে পারে নি রাফিনহা, লামিন ইয়ামালরা।
বদলি হিসেবে খেলতে নামা রবার্ত লেভানদোভস্কির খুব কাছ থেকে করা হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। আরও দুবার সোমার প্রতিহত করেন ইয়ামালের প্রচেষ্টা। সব মিলিয়ে গোলমুখে নয়টি শট নিলেও জালের দেখা পাননি তিনি।
২০২২-২৩ মৌসুমের পর আবার ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের ফাইনালের টিকিট কেটেছে নাজারুজ্জিরা। সেবার ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের।
আগামী ১ জুন মিউনিখে অনুষ্ঠেয় শিরোপার লড়াইয়ে পিএসজি অথবা আর্সেনালের মুখোমুখি হবে তারা।
আর অন্যদিকে ম্যাচ হেরে এই মৌসুমে শেষ হয়ে গেছে বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা। কিছুদিন আগে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রেতে চ্যাম্পিয়ন হয় কাতালানরা। লা লিগার শিরোপা জয়ের দৌড়েও তারাই ফেভারিট। চার রাউন্ড বাকি থাকতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছে তারা।
এখন দেখার অপেক্ষা মিউনিখে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে ইন্টার মিলানের প্রতিপক্ষ হবে কোন দল?
পিএসজি নাকি আর্সেনাল?
উত্তর পাওয়ার জন্য অবশ্য বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
কারণ আজ (বুধবার, ৭ মে) রাতেই পিএসজির বিপক্ষে আর্সেনালের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম লেগে এমিরেটস স্টেডিয়ামে আর্সেনালকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারায় পিএসজি।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0