বিশেষ প্রতিনিধি: দেশে সহিংসতার শিকার ৬৪ শতাংশ নারী তাদের অভিজ্ঞতা কাউকে জানান না। পরিবারের সুনাম রক্ষা, সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং সহিংসতাকে স্বাভাবিক মনে করার প্রবণতাই নারীদের এই নীরবতার মূল কারণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর যৌথ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ-২০২৪’ এ দেখা গেছে, দেশের ৭৫.৯ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, শহর ও গ্রামে নির্যাতনের হারের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। শহরে ৭৫.৬ শতাংশ এবং গ্রামে ৭৬ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ২৭,৪৭৬ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যা দেশব্যাপী নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে।
যৌন নির্যাতনে শীর্ষে বরিশাল
যৌন নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে (৩৫.৭ শতাংশ), এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম (৩৪.১ শতাংশ)। ঢাকায় যৌন নির্যাতনের হার ২৭.৮ শতাংশ, খুলনায় ২৯.৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৭.২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৩ শতাংশ, রংপুরে ২৬.৬ শতাংশ এবং সিলেটে ২৮.২ শতাংশ। গত ১২ মাসে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯.৪ শতাংশ নারী, যেখানে বরিশালে এই হার ১৩.২ শতাংশ।
স্বামী বা সঙ্গীর মাধ্যমে নির্যাতন
জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ নারী স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হন। গত ১২ মাসে এই হার ৪১ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় এই হার কমলেও এখনও তা উদ্বেগজনক।
নন-পার্টনার নির্যাতনে শীর্ষে ঢাকা
সঙ্গী নন এমন ব্যক্তির (নন-পার্টনার) মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন ১৫.৮ শতাংশ নারী। ঢাকায় এই হার সর্বোচ্চ ১৮.৯ শতাংশ, এরপরই চট্টগ্রাম (১৮.৬ শতাংশ)। রাজশাহীতে এই হার সবচেয়ে কম (৯.৬ শতাংশ)।
প্রযুক্তির অপব্যবহার ও নতুন ধরনের নির্যাতন
জরিপে উঠে এসেছে, প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে নারী নির্যাতন বাড়ছে। ব্যক্তিগত ছবি বা অযাচিত মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া, অর্থনৈতিক নির্যাতনও নারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক ইফতেখারুল করিম বলেন, ‘শহরায়নের ফলে গ্রাম ও শহরে নির্যাতনের হার প্রায় সমান। প্রযুক্তির অপব্যবহার ও নতুন ধরনের নির্যাতন নারীদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।’