জেলা প্রতিনিধি,
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজার ৪৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক মো. মতিয়ার মোল্লা বাদী হয়ে এ মামলাটি করেছেন। বুধবার (৩০ জুলাই)বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান।
ওসি সাজেদুর রহমান জানান, মামলায় ৪৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় পাঁচ হাজারজনকে। এ নিয়ে এনসিপির সমাবেশে হামলা, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে এবং হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা হলো।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী লেকু, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএম মাসুদ রানা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ, সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহিদ মাহামুদ বাপ্পি, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতীশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান বিটু, মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ আলী আশরাফ, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান (জিমি), ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী।
সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ১৬ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বর্ণনা থেকে জানা গেছে, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশস্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।
ওই ঘটনায় চার যুবক নিহতের বিষয়ে গত ১৯ জুলাই রাতে পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা করে। এসব মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি এবং জেলা কারাগারে হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়। অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় দুটি, কোটালীপাড়া থানায় একটি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পাঁচ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়। পর দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন বিকেলে শহরের ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়।
এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। গত ২০ জুলাই কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। এখন গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। সব রুটে যানবাহন চলাচল করছে।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0