Logo

লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪০০ গ্রেপ্তার, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়াতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে আরও বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আমেরিকার বিভিন্ন শহর।

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে আরও বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আমেরিকার বিভিন্ন শহর। বুধবার(১১জুন) প্রথম রাতে কারফিউ তুলে নেওয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলেসে এক অস্বস্তিকর শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যার মধ্যে ৩৩০ জন অবৈধ অভিবাসী। এছাড়া ১৫৭ জনকে হামলা ও বাধা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে পুলিশ অফিসারকে হত্যাচেষ্টায় একজন অভিযুক্ত। দুটি পৃথক ঘটনায়, পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে মোলোটভ ককটেল নিক্ষেপের জন্য ফেডারেল প্রসিকিউটররা এখন পর্যন্ত দুই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছেন। অস্থিরতা দমনে মোট চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা এবং সাতশ মেরিন মোতায়েন করা হয়েছে। খবর-বিবিসি

এই অভিযান ‘ভয়’ ও ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি করে বাসিন্দাদের ‘উত্তেজিত’ করেছে: লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ৩০ জন আঞ্চলিক মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস। চলমান বিক্ষোভের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানকে দায়ী করেছেন তিনি। তার মতে, এই অভিযান ‘ভয়’ ও ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি করে বাসিন্দাদের ‘উত্তেজিত’ করেছে। ‘এক সপ্তাহ আগেও সবকিছু শান্তিপূর্ণ ছিল’ তিনি বলেন। ‘শুক্রবার অভিযান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি কঠিন হতে শুরু করে।’ কারেন বাস উল্লেখ করেন, লস অ্যাঞ্জেলেস ‘স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে, ক্ষমতা দখলে ফেডারেল সরকার কতদূর যেতে পারে, সেটা দৃশ্যমান করা হচ্ছে’। এর আগেও তিনি প্রশাসনের কাছে অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েনের পর স্টেট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এখন শহরটিকে ‘মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ওপর ‘আক্রমণ’ করার অভিযোগ তুলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। এ সপ্তাহের শুরুতে সেনা পাঠানোর সময় নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘বিদেশি শত্রুর দ্বারা শহরটি দখল করা’ থেকে রোধ করার জন্যই এই পদক্ষেপ।

গ্যাভিন নিউসম প্রেসিডেন্টের প্রতি পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘তিনি আবারও উত্তেজনা বৃদ্ধির পথই বেছে নিয়েছেন; তিনি আরও শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছেন।’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর, যাকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে, তিনি সতর্ক করে বলেন ‘এরপর অন্য রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ ছড়াবে’।বুধবার, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করে সিনেটের শুনানিতে বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা পাঠানো ‘আইনি ও সাংবিধানিক’। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশ কয়েকটি শহরেও 'বিশৃঙ্খল' বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

জর্জিয়ার আটলান্টায় বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস

জর্জিয়ার আটলান্টায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে দাঙ্গা পুলিশ। যেখানে শত শত মানুষের একটি বিক্ষোভ থেকে কর্মকর্তাদের ওপর আতশবাজি ছোঁড়া হয়েছিল। নিউইয়র্কের পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, লোয়ার ম্যানহাটনে মিছিল করার সময়, যানবাহন চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করলে কয়েক ডজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিবাসন সমাবেশের পরিকল্পনা করায় সান আন্তোনিওতে ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য পাঠিয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ জানিয়েছে, অভিবাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার থেকে বুধবার রাতভর তারা ‘গণগ্রেপ্তার’ করেছে। একাধিক বিবৃতিতে, শহরের পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে বিক্ষোভ বন্ধ না করার জন্য ২০৩ জন, কারফিউ লঙ্ঘনের জন্য ১৭ জন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য তিনজন এবং পুলিশ অফিসারের ওপর মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আক্রমণের জন্য একজন রয়েছেন। সংঘর্ষে দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ, কারফিউ

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে, এমন দাবি করে মঙ্গলবার, শহরের কেন্দ্রস্থলের তুলনামূলক ছোট একটি এলাকায় রাতারাতি কারফিউ ঘোষণা করেন মেয়র কারেন বাস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ কার্যকর হওয়ার পর, শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ, রাবার বুলেট ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবারের কারফিউ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কারেন বাস বলেন, তিনি ‘ভাঙচুর ও লুটপাট বন্ধ করতে’ চান, এবং বলেন, শহরটি ‘বিপর্যয়ের এক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের প্রায় এক বর্গমাইল এলাকা এই কারফিউয়ের আদেশে প্রভাবিত হয়েছে।

পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনেল বলেন, ‘বিক্ষোভ এবং সহিংসতার কিছু চিত্র দেখে মনে হচ্ছে এটি শহরব্যাপী একটি সংকট, আসলে তা নয়।’ বুধবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সাংবাদিকদের বলেন, কারফিউ ‘কিছুটা সাহায্য করেছে’। অন্যদিকে, বিক্ষোভ থামানোর পাশাপাশি অব্যাহত রাখা হয়েছে অভিবাসন অভিযান।

লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করা ন্যাশনাল গার্ড এবং মেরিন বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, তাদের কেবল বিক্ষোভকারীদের আটকের ক্ষমতা রয়েছে। বুধবার মোতায়ন করা বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী মেজর জেনারেল স্কট শেরম্যান বলেন, ‘ফেডারেল কর্মীদের সুরক্ষার জন্যই তাদের কঠোরভাবে ব্যবহার করা হয়, যাতে কর্মীরা তাদের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে এবং তাদের ফেডারেল মিশন ঠিকভাবে শেষ করার জন্য সুরক্ষা পায়’।

শেরম্যান মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অভিবাসন অভিযানে এজেন্টদের সাথে থাকার জন্য প্রায় ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যকে ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং কিছু সৈন্য ইতিমধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেককে সাময়িকভাবে আটক করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ যতক্ষণ না তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই সৈন্যদের আটক রাখার অনুমতি রয়েছে।

বাংলাফ্লো/এসকে

Leave a Comment

Comments 0