জেলা প্রতিনিধি
শেরপুর: টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী সদর বাজারসহ অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এই আকস্মিক বন্যায় দুটি শিশুসহ প্রাণহানি ঘটেছে এবং শত শত পরিবার এক রাতেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে খৈলকুড়া গ্রামের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানকার বিধবা রহিমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আল্লাহ আমার সব কিছু নিয়ে গেছে, সব শেষ হয়ে গেছে, আমি এহন কই যামু? ...বাপ-দাদার কষ্টের সব শেষ।” গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনের শিকার হওয়া রহিমার শেষ সম্বলটুকুও এবার কেড়ে নিয়েছে পাহাড়ি ঢল।
স্থানীয়রা জানান, চোখের পলকে মহারশি নদীর তীব্র স্রোতে ১২ থেকে ১৪টি ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি এবং ডুবে গেছে ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের। প্রায় ১১৩ হেক্টর রোপা আমন ধান এখন পানির নিচে।
এই দুর্যোগে দুটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
ঝিনাইগাতীর ডাকাবর এলাকার ইসমাইল (১৭) মহারশি নদীতে ভেসে আসা গাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।
নালিতাবাড়ীর বুরুঙ্গা ব্রিজ এলাকায় ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় হুমায়ুন (১২)। পরে রাত ৮টার দিকে তার মরদেহ ভেসে ওঠে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালের বন্যায় এই বাঁধটি ভেঙে গেলেও, পানি উন্নয়ন বোর্ড তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাঁরা বলেন, “আমরা বারবার বলেছি কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নেয়নি। আজ সব ভেসে গেছে।”
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান জানিয়েছেন, চেল্লাখালী ও মহারশি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও, ভোগাই নদীর পানি বাড়ছে এবং তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও রেসকিউ টিম প্রস্তুত আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।”
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0