Logo

‘রৌদে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত জিম্বাবুয়েকে ভরসার যোগান দিল বাংলাদেশ’

তাই তো চা বিরতি থেকে দুর্দান্ত শুরু করেও দিনের শেষ পর্যন্ত সাত উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান তোলে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৬ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ৫ রান নিয়ে তাইজুল ইসলাম।

সেঞ্চুরি করে সাদমান ইসলাম।

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ছিল শুধুই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে অলআআট করে বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশের দুই ওপেনার। পুরো মাঠেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের দৌড়াদৌড়ি করতে হয় সাদমান-বিজয়দের ব্যাটে লাগা বল সংগ্রহের জন্য।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিনা উইকেটেই দিনের প্রথম দুই সেশন কাটিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

লাঞ্চে যাওয়ার আগে ২৬ ওভারেই ১০৫ রান তুলে ফেলে ওপেনাররা। তিন বছর পরে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে শতরান আসার আনন্দ অনুভব করছিল ভক্তরা ঠিক তার একটু পরেই আউট হন এনামুল বিজয়।

এরপরেও দেখে শুনে ভালোই খেলে যাচ্ছিলেন সাদমান ও মুমিনুল। চা বিরতিতে যাওয়ার পাঁচ ওভার আগ পর্যন্ত তাদের ব্যাটিং দেখে অবশ্য ভক্তরা ভাবছিল, বড় সংগ্রহের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

কিন্তু বিধি বাম!

চা বিরতির খানিকটা আগ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের এতো দৌড়াদৌড়ি সম্ভবত মায়া জাগায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের মনে। অতিথি হিসেবে এসে জিম্বাবুয়ে দলের খেলোয়াড়দের এতো কষ্ট করা দেখে হয়তো মানবিক করে তোলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।

আর তাই তো চা বিরতি থেকে শুরু করে দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত সাত উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান তোলে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৬ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ৫ রান নিয়ে তাইজুল ইসলাম।

আর বাংলাদেশের ব্যাটারদের এমন আসা-যাওয়া টেস্টে ফিরে আসার বিষয়ে ভরসার যোগান দিচ্ছে জিম্বাবুয়েকে।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই জিম্বাবুয়ে ২২৭ রানে অলআউট হয় নিজেদের প্রথম ইনিংসে। গতকাল ৯ উইকেটে একই স্কোর নিয়েই তারা দিন শেষ করেছিল। আজ তাতে আর বাড়তি রান যোগ হয়নি। তাইজুল ইসলামের ৬ উইকেট শিকারের সুবাদে স্বস্তি নিয়েই ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।

নিজেদের ইনিংসের শুরুটাও ভালো করেছিলেন দুই ওপেনার। চলমান সিরিজের মাঝপথে দলে ডাকা হয়েছিল অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয়কে। সাদমানের সঙ্গে তিনি উদ্বোধনী জুটি গড়েন ১১৮ রানের। ২০২২ সালের পর এই প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ।

প্রায় তিন বছর পর টেস্ট দলে ফিরে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ব্যক্তিগত পঞ্চাশের আগেই ফিরেছেন বিজয়। মুজারাবানির অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল তিনি ঠিকঠাক খেলতে পারলেন না। বল গিয়ে তার পেছনের পায়ে লাগে। এলবিডব্লিউ আউট হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। বিজয় আউট হন ৩৯ রান করে। খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়া বিজয়ের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস এটিই। এমনকি এক ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়েও এর আগে কখনও ৩০ রান করতে পারেননি বিজয়।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে খুব একটা ভুগতে হয়নি জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণের সামনে।

সাদমান ইসলাম ফিফটি পেয়েছিলেন লাঞ্চের আগেই। শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। নিয়মিত বিরতিতে আসছিল বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ১৪২ বলে পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিটাও ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। সেটা ২০২১ সালের জুলাইয়ে হারারেতে।

সাদমানের সঙ্গে মুমিনুলের জুটিটাও জমে যাচ্ছিল। দুজনে মিলে গড়েছিলেন ৭৬ রানের জুটি। তবে পরপর দুই ওভারে দুই ব্যাটারকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চা বিরতির আগমুহূর্তে মাসাকাদজার বলে অপ্রয়োজনীয় স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান।

পরের ওভারের প্রথম বলেই রায়ান বেনেট এলবিডব্লু করেন সেঞ্চুরিয়ান সাদমানকে। ১৮১ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় ১২০ রান করেন সাদমান। টেস্টে যা তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এরপর ৬৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত-মুশফিক।

দলীয় ২৫৯ রানে শান্ত’র (২৩) বিদায়ে সেই জুটি ভাঙে। তখনই শুরু হয় স্বাগতিকদের ব্যাটিং ধস। ২৫৯/৩ থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানেই স্কোরবোর্ড রূপ নেয় ২৭৯/৭ এ।

রানখরার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সমালোচিত মুশফিক ব্যক্তিগত ফিফটি পাওয়ার কাছাকাছি থেকেই ফিরলেন দুর্ভাগ্যের রানআউটে। ভিনসেন্ট মাসেকেসার ওভারের শেষ বলে ১ রান নিয়ে পরের ওভারে স্ট্রাইক নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ফলে ৪০ রানেই থামে অভিজ্ঞ এই তারকার ইনিংস।

গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯১ রানের পর থেকে ১২ ইনিংসে মাত্র দুবার ত্রিশের ঘরে যাওয়াই যাঁর সর্বোচ্চ দুই ইনিংস, এই ১২ ইনিংসের মধ্যে সর্বশেষ চার ইনিংসসহ মোট ৬ বারই এক অঙ্কে যিনি আউট হয়েছেন, সেই মুশফিকুর রহিম আজও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে অভিজ্ঞতাকে হার মানিয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।

এ ছাড়া জাকের আলি ৫ এবং নাঈম হাসান ৩ রান করে ফিরলে বড় শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। তবে মিরাজ-তাইজুল দিনের বাকি কয়েক ওভার নিশ্চিন্তে পার করেছেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন মাসেসেকা।

সব মিলিয়ে রোডেশিয়ানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের পুরো দিনটি ছিল বাংলাদেশেরই। যেভাবে খেলোয়াড়রা চেয়েছে সেভাবেই সবকিছু হয়েছে।

প্রথম দুই সেশন দেখা মেলে দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখানো বাংলাদেশের। আর শেষ সেশনটা দেখা মেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মানবিক দিক যেখানে উইকেট উপহার দিয়ে জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতে ১-০ ব্যবধানে ইতোমধ্যেই এগিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0