বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি নিয়ে পাওয়া গেছে দুই ধরণের বক্তব্য।
রাষ্ট্রপক্ষ সকালে হাইকোর্টকে মামলার আংশিক নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য জানায় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে তার কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ। তিনি বলেন, কোনো নথি পুড়ে গেছে এ ধরনের নিউজ সঠিক নয়।
একইসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, মামলার আংশিক নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয়।
এ দিকে, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করতে আদালতের কাছে আরও ৯ মাসের সময় চান রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আদালত ছয় মাস সময় দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিনভর সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এসব ঘটে আদালত পাড়ায়।
সকালে আদালতকে জানানো হয় নথিপত্র পুড়ে গেছে
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ এ তথ্য দেন। তবে তদন্তের গোপনীয়তার স্বার্থে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেননি তিনি।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে আরশাদ রউফ তদন্ত সম্পন্ন করতে ৯ মাস সময় চান।
তিনি আদালতকে বলেন, তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। আরও সময় দরকার।
মামলার রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মামলাটির তদন্ত বারবার পেছায়। এতে জনমনে খারাপ বার্তা যায়।
পরে আদালত সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ঘটনায় করা এ মামলার তদন্তে আরও ৬ মাস সময় মঞ্জুর করেন।
নথিপত্র আংশিক পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয়
সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আংশিক আগুনে পুড়ে গেছে বলে যে তথ্য জানানো হয়েছে তা সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ।
ডিবি হেফাজতে সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয়: ডিএমপি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাওয়ার তথ্যটি ‘সঠিক নয়’ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপি।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
একই বিষয়ে আজ দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দফতর থেকে পাঠানো আরেক বার্তায় জানানো হয়েছে, কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, তা সঠিক নয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব আরশাদ রউফ বলেছেন। ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি ও ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া সময় সাপেক্ষ।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। একই সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
এদিকে, এ মামলার বাদী পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়।
২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেফতার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, সাগর-রুনি মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করা এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে আমরা একটা রিট দায়ের করেছিলাম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন। রুলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। এরপর আমাদের পৃথক একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ মামলার চূড়ান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0