বাংলাফ্লো শিক্ষা
ঢাকা: লতিকা সেন ১৯১১ সালের ২৭মে পিতামহ প্ৰখ্যাত আইনজীবী প্ৰফুল্লকুমার দাসের নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার বিবাহের পূর্বে নাম লতিকা দাস। পিতার নাম নিবারণচন্দ্ৰ দাস এবং মায়ের নাম কিরণবালা।
ঢাকার ইডেন স্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পরে ১৯৩০ খ্রী. ঢাকার বিপ্লবী নেত্রী লীলা নাগ (রায়) প্রতিষ্ঠিত ‘নারী শিক্ষা মন্দির’-এর দশম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সেই স্কুল থেকে ‘ঢাকা বোর্ড অব সেকেন্ডারী এড়ুকেশন’-এর হাই স্কুল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন লতিকা। ঐ স্কুলের প্রতিস্থাকালীন ছাত্রীদের একজন তিনি। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ. পড়েন।
পারিবারিক কারণে কলিকাতায় যেতে হয় তাকে। সেখানে বেলতলা গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্কুল জীবনেই ঢাকায় লীলা রায় প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালী সঙ্ঘ’-এর সদস্য হিসাবে নানা বৈপ্লবিক ও সমাজসেবামূলক কাজে অংশ গ্ৰহণ করেন। গোপন বৈপ্লবিক সংস্থা ‘শ্ৰী সঙেঘও যুক্ত ছিলেন তাঁর ভাইদের সঙ্গে।
ঢাকায় থাকার সময়েই আত্মগোপনকারী কমিউনিস্ট কর্মীদের সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হন। কলিকাতায় বসবাসের সময় তিনি ‘বেঙ্গল লেবার পার্টি’র সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৩৬ খ্ৰী. কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্টির সদস্য হন। বাংলাদেশে তিনিই কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মহিলা সদস্য।
১৯৩৯ খ্রী. কমিউনিস্ট পার্টির ডাঃ রণেন সেনের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তখনকার রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রণেন সেনকে পুলিসের নির্দেশে কলিকাতা থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৪১ খ্রী. তাঁর পুত্রসন্তান জন্মাবার পরে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে বেলতলা স্কুল থেকে তিনি কর্মচ্যুত হন। সৈ সময়ে তাঁর স্বামী হিজলী জেলে বন্দী। একমাত্ৰ সহায় তখন ছিলেন তাঁর মা কিরণবালা। ১৯৪৩ খ্রী. ভয়াবহ দুৰ্ভিক্ষ ও সামাজিক বিপর্যয়ের পর অসহায় নারীদের আশ্রয়-শিবির ও কর্মকেন্দ্ৰ নারী সেবা সঙ্ঘ স্থাপিত হলে তিনি তাঁর অফিসের কাজে ও অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে (২৭ এপ্রিল) রাজনৈতিক বন্দীমুক্তির আন্দোলনের মহিলা মিছিলে অংশগ্রহণকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এই বিপ্লবী। একই মিছিলে শহীদ হন প্রতিভা গাঙ্গুলী, অমিয়া দত্ত ও গীতা সরকার।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0