ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: জেলার নান্দাইলে অভিযান চালিয়ে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নান্দাইল পৌরসভার মোরগমহল এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হাসান মাহমুদ জুয়েল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ আহমেদ।
তিনি বলেন, নান্দাইলের মহিলা দল নেত্রী তাহমিনা আক্তার রিপার স্বামী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হাসান মাহমুদ জুয়েল। কিন্তু পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। বিকেলে তিনি বাসায় এসেছেন জানতে পেরে অভিযান চালিয়ে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
মামলার বাদীর দাবি আপসনামার মাধ্যমে মামলাটি আপস হয়ে গেছে। তারপরও গ্রেফতার প্রসঙ্গে ওসি বলেন, আপস হয়ে গেছে বললেই হবে না। ডাক্তারি রিপোর্ট এখনও আসেনি। আর ডাক্তারি রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মামলার চার্জশিট হবে না। আর চার্জশিট না হলে আপস করা যাবে না। আপস মীমাংসার বিষয় আদালতে।
মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া নান্দাইল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডিপাশা এলাকার মৃত আব্দুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে। রফিকুলের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার রিপা বর্তমানে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি, নান্দাইল উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য খুররম খান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাসার নিচে মহিলা দল নেত্রী তাহমিনা আক্তার রিপার স্বামী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া পোস্টার টাঙাতে যান। সেসময় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বে তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে রফিকুলকে কুপিয়ে জখম করেন। এছাড়া তার মুদি দোকান থেকে লুটপাট করে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি করেন। আহত রফিকুল প্রথমে ময়মনসিংহ, ঢাকায় ও পরে ভারতের ভেলোর থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৩০-১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাহমিনা আক্তার রিপা ও তার স্বামী রফিকুল মামলা করতে সাহস পাননি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মামলা করে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে স্বামী-স্ত্রী পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলকে প্রধান আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ যুবলীগ কর্মীরাও রয়েছেন। কিন্তু মামলার ১৫ দিন পর ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপস মীমাংসা করেন মহিলা দল নেত্রী তাহমিনা আক্তার রিপা। এদিন ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বামী রফিকুল স্ত্রীর কথামতো স্বাক্ষর করেন। এমন ঘটনায় উপজেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপস করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মামলার আসামিদের পরিবারের লোকজন আমাদের বাসায় এসে কান্নাকাটি করে মামলা তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন। আসামিদের শাস্তি হলেও আমার ক্ষতিপূরণ ফিরে আসবে না। এমন চিন্তা করে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে মামলা আপস করি। কিন্তু পুলিশ বলছে, মামলা আপস হয়নি।
রফিকুলের স্ত্রী উপজেলা মহিলা দলের বর্তমান আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আক্তার রিপা বলেন, আওয়ামী সরকারের শাসনামলে মামলা করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এখন সময় আসায় স্বামীকে মামলা করতে বলি। কিন্তু পরে আসামিদের পরিবারের লোকজনের কান্নাকাটি দেখে মায়া লেগে যায়। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে আপস করেছি। স্বামীকে বলেছি আপসনামায় স্বাক্ষর করতে। তিনি স্বাক্ষর করেছেন।
তিনি বলেন, কোনো আসামির কাছ থেকে টাকা নিইনি। আপসনামাটি থানার ওসির কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু ওসি বারবার বলছে, আপস করতে হলে আদালতে যান।
বাদী-বিবাদী আপসনামার মাধ্যমে আপস করলে আসামি গ্রেফতার করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, এটা পুলিশের এখতিয়ার। আপসনামা পেলেও পুলিশ ইচ্ছা করলেই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেন। তবে পুলিশ ইচ্ছা করলে আপসনামাটি গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট) দিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে পুলিশ চাইলেই আসামি গ্রেফতার হবে না। তবে পুলিশ এফআরটি দিয়ে দিলেও বাদীকে অবশ্যই আদালতে যেতে হবে।
জেবি