বাংলাফ্লো ডেস্ক
ঢাকা: দেশের ক্রিকেটের আলোচিত এক নাম সাকিব আল হাসান। দীর্ঘসময় ক্রিকেট বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে থাকা বাংলাদেশের একমাত্র নাম তিনি। ক্রিকেট খেলা চলাকালীন সময়েই প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে। তবে জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষাপটে পট পরিবর্তনের আগে পরে নানাভাবে আলোচনায় আসেন সাকিব আল হাসান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নীরব থাকা এই ক্রিকেটার ক্ষমতার পালাবদলে আর ফিরতে পারে নি দেশে। ইতোমধ্যেই একাধিক মামলায় জড়িয়েছে তার নাম।
অবশেষে সব ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেসব থেকে নিজের নাম মুছতে যে কোনও ধরনের তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তিনি।
সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান বলেন, আমি এখনও বিশ্বাস করি যে আমি যদি আজ নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার মানুষ আমাকে ভোট দেবে, কারণ তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব।
রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাকিব বলেন, দেখুন, মানুষ যতই বিতর্ক করুক যে আমার রাজনীতিতে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, তবে যারা এটা বলছে তাদের বেশিরভাগই আমার এলাকার ভোটার নয়। মাগুরার ভোটাররা অবশ্য ভিন্নভাবে চিন্তা করে, এবং সেটাই আসল কথা।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেখুন, আসল কথা হলো, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যদি আমার ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যে-ই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেও ভুল করবে। সেটা ডাক্তার হোক, ব্যারিস্টার হোক, ব্যবসায়ী হোক—যেই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেটা ভুল হবে। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার, এবং যে কেউ তা করতে পারে।
তিনি বলেন, মানুষ আপনাকে ভোট দিক বা না দিক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি মনে করি আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন সঠিক ছিলাম, এবং এখনও বিশ্বাস করি আমি সঠিক ছিলাম, কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়েছিল আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব, এবং আমার এটাও মনে হয়েছিল যে মাগুরার মানুষ আমাকে চায়। আমি বিশ্বাস করি আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, এবং আমার মনে হয় না কারো সংশয় আছে যে আমি আবার দাঁড়ালে আমি ছাড়া অন্য কেউ জিতবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই, আমি আমার কাজে কোনো ভুল দেখি না।
সাকিব আল হাসান বলেন, যখন আমি নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন আমি মাগুরার মানুষের সেবা করার সুযোগ চেয়েছিলাম, এবং মানুষ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, আমি তাদের যেভাবে সেবা করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি, এবং এটা আমি মেনে নিই।
তিনি বলেন, এটা আমার বিশ্বাস, এবং সেই কারণেই আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমি যে কথাটি বারবার বলি তা হলো, আপনি যদি সিস্টেমের ভেতরে না আসেন, তাহলে কীভাবে পরিবর্তন আনবেন? আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিল।
তিনি আরও বলেন, কারো ক্ষমতাই দীর্ঘ নয়, পালাবদল অনিবার্য এবং প্রকৃতির নিয়মে সেটা হবেই। এখন যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা চিরকাল থাকবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম—সেটা ১০ বছর হোক বা ২০ বছর, তারাও চিরকাল একই জায়গায় থাকবে না। যদি অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসে, তারাও চিরকাল থাকবে না, এবং এভাবে চলতেই থাকবে। চক্র চলতে থাকে, এবং কখন শেষ হবে তা আপনি অনুমান করতে পারবেন না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কানাডার গ্লোবাল টি-২০ লিগে এক দর্শকের সঙ্গে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সাকিব আল হাসান। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরপর সাকিবের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে সাকিব বলেন, আমার মনে হয় ঐ মানুষটা ইচ্ছা করেই আমাকে উসকানোর চেষ্টা করছিল— অথবা হয়তো সে নিজেই হতাশ ছিল।
সে বারবার বলছিল, আপনি কিছু করছেন না কেন? এক পর্যায়ে আমি বললাম, ভাই, আপনি কী করেছেন? সেখান থেকেই ব্যাপারটা বড় হয়ে যায়।
নিজেকে ডিফেন্ড বলে সাকিব বলেন, দেখুন, মানুষ বিচার করবে আমি কিছু করেছি কী করিনি। কিন্তু কেউ যদি আমাকে বারবার প্রশ্ন করে, আমার কি উত্তর দেওয়ার অধিকার নেই? আমি তাকে, এমনকি আশপাশের অন্যদেরও জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনারা বলুন আমি কী করতে পারি?” আমি বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিলাম না।
আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দোটানায় পড়েছিলেন, এমনটিই জানিয়েছেন সাকিব।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করা উপযুক্ত হবে, কোনটা কার্যকর হবে।’
সাকিব মনে করেছেন, ওই সময় কথা বললেও সেটি কোনো কাজে আসতো না। যেহেতু তিনি দেশে নেই, সেক্ষেত্রে সরাসরি কোনো প্রভাবও রাখতে পারতেন না। যে কারণেই চুপ ছিলেন।
সাকিব বলেন, ‘সরকার এবং আরও অনেকে চেয়েছিল আমি একটা পোস্ট দিই। কিন্তু তাতে কী হবে? সেটা কি সাহায্য করবে? নাকি আরও আগুনে ঘি ঢালা হবে? আমি সব সময় দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার পক্ষে। যদি আমি সরাসরি কিছু পরিবর্তন আনতে না পারি, তাহলে ফাঁকা কথারই বা মানে কী?’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় একটি সাফারি পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলেন সাকিব। তার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সাক্ষাৎকারে সেই ছবির ব্যাখ্যা দিয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার।
সাকিব বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম—আগে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর সকার লিগ খেলতে, তারপর কানাডায়। ছবিটা কানাডায় তোলা। আমি নিজে সেটা পোস্ট করিনি। তারপরও, আমি দায় নিচ্ছি। এটা ছিল আগে থেকে পরিকল্পিত একটি পারিবারিক ভ্রমণ। এখন ফিরে তাকালে বুঝি, একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তখন আমাকে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। আমি সেটা স্বীকার করছি। তবে আমার সবসময়ের ফোকাস ছিল ক্রিকেট—আমি এমপি হওয়ার আগেও, পরেও। আমাকে কখনো রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হতে বলা হয়নি। সব সময়ই বলা হয়েছে, “তুমি ক্রিকেট খেলো।” তাই আমি সেটাতেই মনোযোগ দিয়েছি।’
ভাইরাল সেই ছবিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নেটিজেনরা। তবে একটি ছবির কারণে পরিস্থিতি এতটা জটিল হয়ে যাবে, সেটি ভাবেননি সাকিব।
৩৮ বছর বয়সী টাইগার অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমি ভাবিনি যে ব্যাপারটা এত বড় হয়ে যাবে। কিন্তু যখন প্রতিক্রিয়া আসা শুরু হলো, তখন বুঝলাম বিষয়টা কতটা গুরুতর। আমি এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা বলেছে ছবিটা পোস্ট করার সময় নিয়ে তারা কষ্ট পেয়েছে। এখন বুঝতে পারি, এটা একটা ভুল ছিল। অন্যরাও এমন কিছু পোস্ট করলেও, আমারটা হয়তো বেশি নজরে এসেছে—হয়তো আমি কে, সেই কারণেই। আমাকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
সাকিব এখন যুক্তরাষ্ট্রই আছেন। দেশের মাটিতে টেস্ট খেলে অবসর নিতে চাইলেও তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডেতে অবসর নেওয়ার চিন্তা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি পারেননি সাকিব।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0