স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: একটা সময় ছিল যখন অলিম্পিক বা কমনওয়েলথ না হোক অন্তত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সাঁতারে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখাতো সাঁতারুরা। কিন্তু গেল কয়েক মৌসুমে সেটা হয়ে উঠেছে ‘সোনার হরিণ। বিগত ৯ বছর অর্থাৎ ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসের পর সাঁতারে বাংলাদেশ আর কোনও সোনা জেতেনি।
তবে সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে আবারও নতুন করে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ কর্মসূচী শুরু করেছে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন। তৃণমূল থেকে সাঁতারু তুলে আনার এই কর্মসূচী ফেডারেশন সর্বশেষ আয়োজন করেছিল ২০১৮ সালে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেধাবী সম্ভাবনাময় ও সুবিধাবঞ্চিত সাঁতারুদের খুঁজে বের করে তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়ায় ফেডারেশনের উদ্দেশ্য। এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) অডিটরিয়ামে সাঁতার ফেডারেশন আয়োজন করে সংবাদ সম্মেলনের।
মূলত দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা থেকে আসা সাঁতারুদের নিয়ে ১৫টি ভেন্যুতে চলবে এই বাছাই কার্যক্রম। ১০ মে মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচী। এ দিন বাছাই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
বাছাই প্রক্রিয়া চলবে তিন ধাপে। যেখানে সারা দেশ থেকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হবে ৬০০ সাঁতারু। এরপর ঢাকায় হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাছাই। সেখানে ৬০০ থেকে সাঁতারু কমিয়ে আনা হবে ১০০ জনে। সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত বাছাই করা হবে ৫০ জন সাঁতারুকে। চূড়ান্ত পর্যায়ের এই বাছাইকৃত সাঁতারুদের দুই বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বয়সভিত্তিক ‘ক’ গ্রুপে ৯-১১ বছর বয়সী সাঁতারুরা অংশ নেবে। ১২-১৫ বছর বয়সী সাঁতারুরা অংশ নেবে ‘খ’ গ্রুপে। ফ্রি স্টাইল ও নিজের পছন্দের কোনও ইভেন্টে সাঁতারে অংশ নিতে পারবে প্রতিযোগীরা।
প্রথম ধাপে প্রতিটি উপজেলা থেকে বাছাই করা হবে। এরপর জেলা পর্যায়ে নেওয়া হবে ৬০০ জনকে। দ্বিতীয় পর্বে ঢাকায় থাকবে ১০০ জন। এরপর সেখান থেকে যে ৫০ জন চূড়ান্তভাবে টিকে যাবে তাদের নিয়েই চলবে প্রশিক্ষণ।
এসএ গেমসে সোনাজয়ী সাঁতারু শাহজাহান আলী রনি, মাহফুজা খাতুন শিলা, জুয়েল আহমেদসহ ফেডারেশনের কোচেরা এই বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
এই কর্মসূচী নিয়ে দারুণ আশাবাদী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুবুর রহমান শাহীন। সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি সেটাই বললেন, “আমরা ১০ মে থেকে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামটি শুরু করতে যাচ্ছি। সবার দোয়া কামনা করছি যেন সফলভাবে এই প্রোগ্রাম শেষ করতে পারি। প্রাইম ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায়, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সহযোগিতায় এবং বিশেষ করে আমাদের সম্মানিত সভাপতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামকে এগিয়ে নিতে পারছি। আশা করি এই ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে আমাদের সাঁতারে যে ক্রাইসিস চলছে সেই সময়টুকু থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব।”
একই সঙ্গে তিনি দেশের প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের সন্তানদের সাঁতারে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, “আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব আপনাদের সন্তানকে ঘরে বসিয়ে না রেখে এবং মাদকের যে ভয়াল থাবা থেকে সুরক্ষা দিতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমি প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের বলব আপনার সন্তানকে সাঁতারে দেন এবং সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলুন।”
‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ কর্মসূচীর জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৬ কোটি। এরই মধ্যে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে সাঁতার ফেডারেশনকে। প্রাইম ব্যাংক থেকে আরও সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংকের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন সৈয়দ রায়হান তারেক, ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নিবেদিতা দাস ও কোষাধক্ষ্য মেজর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (অব.)।
‘সেরা সাতারুর খোঁজে’ কর্মসূচি যদি সফল হয়, তবে হয়তো আগামী পাঁচ বছর পরে কোনো এক এসএ গেমস, এশিয়ান গেমস বা কমনওয়েলথ গেমসে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। সেই স্বপ্নযাত্রার প্রথম ধাপটা যেন শুরু হয়ে গেল এখনই!
বাংলাফ্লো/এসও
Comments 0