আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: পাকিস্তান ও তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে ভারতের হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
বুধবার (৭ মে) ভোরের আগে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরসহ নয়টি স্থানে হামলা চালানোর দাবি করেছে ভারত; এসব হামলায় ৮ জন নিহত হয়েছে বলে ভাষ্য পাকিস্তানের। তাদের প্রত্যাঘাতে ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে বলেও দাবি করছে ইসলামাবাদ।
এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে,কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে রাতভর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে তিন বেসামরিক নিহত হয়েছে। তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, কাশ্মীরে হামলায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতাতেই ‘সন্ত্রাসীদের শিবিরে’ ভারতের এ ‘সুনির্দিষ্ট’ হামলা।
জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল,চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ হামলার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বেশিরভাগ বার্তাতেই আহ্বান জানানো হয়েছে,বলছে এনডিটিভি।
পাকিস্তানে ভারতের হামলার মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা যে মাত্রায় গেল, তাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক ওভাল অফিসে ঢোকার সময়ই খবরটা পেলাম।”
ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করছি অতীতের কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা অনেক, অনেক যুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে আসছে।
সঠিক করে বলা হলে, এক শতক ধরে তারা লেগে আছে বলে মনে করতে পারেন। আশা করছি এটি দ্রুতই শেষ হবে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার বিষয়ে সতর্ক নজর রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি এখন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বেও রয়েছেন।
এর আগে পাকিস্তানে আক্রমণের পর মঙ্গলবার রাতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ফোনে রুবিওকে দেশের সামরিক পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাস।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাতের ভার ‘বিশ্ব বহন করতে পারবে না’ বলে গুতেরেস মন্তব্যও করেছেন।
পাকিস্তানে ভারতের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন,তারা উত্তেজনা আর না বাড়িয়ে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনেরও আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের হামলাকে ‘দুঃখজনক’অভিহিত করে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, শান্ত ও সংযত থাকার এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে এমন পদক্ষেপ এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
পাকিস্তানে হামলার পর ভারত সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েলের।
ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুবেন আজার এক্সে বলেছেন,ইসরায়েল ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে।
সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো জায়গা নেই,বলেছেন তিনি।
জাপানের মন্ত্রিসভার মুখ্য সচিব ইয়োশিমা হায়াশি বলেছেন,গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জোরালো নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। একইসঙ্গে আমরা এ নিয়েও উদ্বিগ্ন যে- হামলা,পাল্টা হামলার মাধ্যমে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং তা পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি সংযম প্রদর্শন ও সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানাই।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে ওঠে এমন উত্তেজনা’ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র বিষয়ক দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন,শান্তিপূর্ণভাবে সঙ্কট সমাধানে এবং শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে কূটনীতি ও সংলাপই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রভাবশালী দেশ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির বুধবার ভারত সফরে যাওয়ার কথা। দিন কয়েক আগে তিনি ইসলামাবাদও গিয়েছিলেন। উত্তেজনা কমাতে ইরান আগেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এবার ভারত সফরে তার দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করার কথা।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন,বুধবার ভোররাতে তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের যে সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার সদরদপ্তরও আছে।
তাদের ভাষ্যমতে,জইশ-ই-মোহাম্মদের সদরদপ্তর ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে,লস্কর-ই-তৈয়বারটা একই প্রদেশের মুরিদকে-তে,দুটোতেই হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী যে বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বিবিসির কাছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র।
ভারত বলছে, উত্তেজনা না বাড়াতেই তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কোনো স্থাপনাই তাদের হামলার নিশানায় ছিল না।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে,ভারতের এ ‘কাপুরুষোচিত’হামলার জবাব তারা দেবেই। ভারতের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় করণীয় নির্ধারণে বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি)জরুরি বৈঠকও ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
বাংলাফ্লো/এসএস
Comments 0