ডেস্ক রিপোর্ট : সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী আলেপ্পোতে আবার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, হায়াত তাহরির আল-শাম বিদ্রোহীদের হামলায় গতকাল শনিবার বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে সেখানে তাঁরা নতুন সেনা মোতায়েন করেছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়। তবে সিরিয়ার একটি সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সেনা প্রত্যাহারের খবর অস্বীকার করেছে। বলেছে, সিরিয়ার সেনারা এখনো তাদের অবস্থানে লড়াই করে যাচ্ছে। এদিকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংকট সমাধানে সিরিয়া সরকারের অনীহা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) মুখপাত্র শন সাভে। উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনও এর অন্তর্ভুক্ত বলেন তিনি। গত বুধবার থেকে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আকস্মিক হামলা শুরু করে। প্রায় এক দশক পর তারা সরকার নিয়ন্ত্রিত ছোট শহরগুলোর দখল নিতে থাকে এবং আলেপ্পোয় পৌঁছে যায়। আলেপ্পোর বেশির ভাগ বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে। ২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে উত্তরাঞ্চলীয় এই নগরের পুনর্দখল নিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী এবং তাঁর মিত্র রাশিয়া, ইরান ও আঞ্চলিক শিয়া বিদ্রোহীরা। গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদকে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। আসাদের পক্ষে তাঁর মিত্র রাশিয়া বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। এইচটিএস একসময় নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক এবং আরও কয়েকটি দেশ নুসরা ফ্রন্টকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র আলেপ্পোর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)। একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া (সংকটের সমাধানে) সিরিয়া সরকারের অনীহা এবং রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেছেন এনএসসির মুখপাত্র শন সাভেট। তিনি বলেন, সেটাই এখন প্রকাশ্যে আসছে, উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনও এর অন্তর্ভুক্ত। এখন ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের’ নেতৃত্বে যে হামলা হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই বলেও বলেছেন সাভেট। তিনি ‘উত্তেজনা প্রশমন... এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাব ২২৫৪–এর অধীন গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংকট সমাধানের তাগাদাও’ দিয়েছেন। ওই প্রস্তাবে একটি যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক উত্তরণের কথা বলা আছে। সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই গৃহযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে কয়েক বছর আগেই দেশটির বেশির ভাগ অংশে সংঘর্ষ থেমে গিয়েছিল। মিত্র ইরান ও রাশিয়ায় সহায়তায় আসাদ বাহিনী সিরিয়ার বেশির ভাগ অংশ এবং সব বড় বড় নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে আলেপ্পো সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর দখলে। বিদ্রোহীরা পুনরায় আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখান থেকে আলী জুমা নামে একজন বিদ্রোহী বলেন, ‘আমি আলেপ্পোর সন্তান, আট বছর আগে ২০১৬ সালে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম। আমরা মাত্রই ফিরে এসেছি। এটা অসাধারণ এক অনুভূতি।’ আলী জুমার এই বক্তব্য টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও আলেপ্পোর বেশির ভাগ অংশে বিদ্রোহীদের প্রবেশের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা চালানোর কথাও বলা হয়েছে।