জেলা প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: কালুরঘাট সেতুতে কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুইজন।
ট্রেনটি ‘ডেড স্টপেজ সিগন্যাল’ না মেনে কালুরঘাট সেতুতে উঠেছিল বলে সংশ্লিষ্ট একজন স্টেশন মাস্টার জানিয়েছেন।
বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী স্টেশন পার হয়েই কালুরঘাট সেতু। আর সেতু পার হয়ে নগরীর জানে আলী হাট স্টেশন।
জানে আলী হাট স্টেশন মাস্টার নেজাম উদ্দিন বলেন, কালুরঘাট সেতু ‘ডেড স্টপেজ সেতু’। প্রতিটি ট্রেন সেতুতে ওঠার আগে দাঁড়িয়ে যাবে। সেখানে ‘ডেড স্টপেজ বুকে’ স্বাক্ষর করতে হয়। পাশাপাশি সেতু পার হওয়ার সময় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলা যায় না।
“বৃহস্পতিবার রাতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোমদণ্ডী স্টেশন পার হয়ে ‘ডেড স্টপেজ সংকেত’ না মেনে দ্রুত গতিতে সেতুতে উঠে যায়। সেতুতে একটি অটো রিকশা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পশ্চিম পাশ থেকে পার হওয়া কিছু গাড়ি সেতুতে আটকে ছিল। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।”
স্টেশন মাস্টার নেজাম উদ্দিনের দাবি, সেতুতে থাকা গেইটম্যান দূর থেকে রেড সিগন্যাল দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পর্যটক এক্সপ্রেসের লোকমাস্টার (চালক) ওই সিগন্যালও মানেনি। ডেড স্টপ বইতে স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও সেটা করেননি।”
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী আন্তঃনগর পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালুরঘাট সেতুর বোয়ালখালী অংশ দিয়ে প্রবেশের সময় সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলকে চাপা দেয়।
তাতে আহত হন অন্তত ২২ জন।হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের দুজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়।
বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি বলেন, “দুর্ঘটনায় আমরা এক শিশুসহ দুই জন মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।
“বিভিন্ন ভাবে তিনজন নিহতের খবর আসছে। আমরা ভেরিফাই করেছি, তিনজন না, দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তুষার নামে একজন অটোরিকশার চালক, আয়েশা নামে অপর শিশুটির বয়স দুই বছর।”
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জিতি জানান, তুষারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর শিশুটিকে বেসকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহতদের মধ্যে একজন বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পাঁচ জন নগরীর বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে এবং চারজন বোয়ালখালী উপজেলার বেসরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তুষার বোয়ালখালী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাপাড়ায় থাকতেন বলে স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নূরে আলম আশেক জানান, রাতে আহত অবস্থায় যাদের ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসাধীন আছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা নিহত একজন এবং আহত অবস্থায় আরও তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ট্রেনের নিচ থেকে তিনটি অটোরিকশা, তিনটি মোটর সাইকেল এবং একটি আইসক্রিম ভ্যান বের করেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আবদুল মান্নান জানান।
পূর্ব রেলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. কামরুজ্জামান , “দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
বরখাস্ত চারজন হলেন পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা, লোকো মাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ এবং অস্থায়ী গেট কিপার মাহবুব।
কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, “কারো গাফিলতি ছিল কি না তা কমিটি তদন্ত করে দেখবে। পাশাপাশি সেতু পরিচালনায় দায়িত্বটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের। তদন্তে যদি তাদের কোনো গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার (চট্টগ্রাম) নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল যোগাযোগের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
সংকীর্ণ এই সেতু দিয়ে একসঙ্গে দুই দিকে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এক দিকের যানবাহন আটকে রেখে অন্যপাশের গাড়ি ছাড়া হয়।
বাংলাফ্লো/এসকে
Comments 0