বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এবং র্যাবে দায়িত্বরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুমে জড়িত থাকার অভিযোগ এলেও সেনাবাহিনী ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে’ এ অপরাধে জড়িত ছিল না বলেই মনে করেন সরকারের গুম সংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তবে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরে কমিশনের সদস্য নূর খান বলছেন, সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জড়িত না থাকলেও গুমের বিষয়টি তারা ‘জানত’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
‘গুমের’ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেওয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়, গুমের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে।গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বিভিন্ন 'ব্ল্যাক সাইট' পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ‘আয়নাঘর’, যেখানে বন্দিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে চরম নির্যাতন চালানো হত।
বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া তিনটি গোপন বন্দিশালা গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতিসংঘের ‘গুম’ বিষয়ক কার্যনির্বাহী দলের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে গ্রাজিনা বারানোভস্কা বিভিন্ন সংস্থায় (যেমন র্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবি) অতীতে কর্মরত কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, এ ধরনের সেনা সদস্যরা ‘সংশ্লিষ্ট সংস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণাধীন থেকে’ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিচার প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
ওই সাক্ষাত বিষয়ে গুম সংক্রান্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাব দিতে গিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ডিজিএফআই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। ডিজিএফআই সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে রিপোর্ট করে। সাধারণত প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্বটি পালন করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত হচ্ছিল।
“এনএসআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত হত, যদিও তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। এটা ঠিক ইন্সটিটিউশনালি আর্মি রেসপন্সিবল না। এটা সত্য। কিন্তু ডিজিএফআইয়ের অফিসাররা, এনএসআইয়ের অনেক অফিসার, বিশেষ করে র্যাবের যারা কমান্ডিং অফিসার, র্যাবের এডিজি অপস যিনি থাকতেন তারা কিন্তু আর্মির অফিসার। এই অফিসাররা র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই এ ডেপুটেশনে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। বেসিক্যালি তারা আর্মড ফোর্সের অফিসার, তারা সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী বা নৌবাহিনীর হতে পারেন। তাদের কমান্ডটা ডিফরেন্ট।”
এসময় গুম সংক্রান্ত কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, “তবে তারা জানত না এটা বলার সুযোগ নেই। কারণ তাদের একজন সাবেক সেনাপ্রধান পাবলিকলি বলেছেন যে, দুজন সেনাসদস্য তার কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন, তারা এই ধরনের কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে চান না। একজন সাবেক সেনাপ্রধান এই স্টেটমেন্ট দেওয়ার পরে তারা জানত না–এই কথা বলার সুযোগ নেই। তবে অফিসিয়ালি ইনভলভ ছিল না।”
এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, “অ্যাজ আ ইন্সটিটিউশন–তারা (সেনাবাহিনী) অফিসিয়ালি ইনভলভ ছিল না।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চতুর্দশ প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া সম্প্রতি তার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করে নিজের ফেইসবুক পাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখছেন। তিনি ২৫ জুন ২০১২ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১৫ সালের ২৫ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়। তার একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখার দিকে ইঙ্গিত করে ওই কথা বলেন নূর খান।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0