Logo

আবারও নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দিল মিউনিখ

ইতালির ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জিতে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: জার্মানির মিউনিখ শহরে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনাল মানেই নতুনভাবে ইতিহাস গড়ে শিরোপা জিতবে কোন দল। এক, দুইটা দল নয় বরং পাঁচ টা দল নতুনভাবে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জিতে সেটারই কথা যেনো বলছে।

শনিবার (৩১ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় জার্মানির মিউনিখের অ্যালিয়ঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হয় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল। আর এই ম্যাচে ইতালির ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জিতে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন।

এর আগে অ্যালিয়ঞ্জ অ্যারেনায় প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে আরও চারটি দল।

১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম ফরেস্ট, ১৯৯৩ সালে মার্সেই, ১৯৯৭ সালে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে এই মাঠেই।

সর্বশেষ, ২০১২ সালে তো যে ক্লাবের মাঠ এই অ্যালিয়ঞ্জ এরেনা সেই বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ের স্বাদ পায় চেলসি। তাও ইতিহাসে প্রথম বারের মতো।

আর এবার ইন্টার মিলানকে হারিয়ে সেই শিরোপা প্রথমবারের মতো ঘরে নিল প্যারিস সেন্ট জার্মেইন।

এ দিন অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে শুরু থেকেই প্রাধান্য বজায় রেখে খেলে লুইস এনরিকের শিষ্যরা।

ফাইনালের আগে যেমন প্রতিদ্বন্দিতা ভাবা হচ্ছিল তার বিন্দুমাত্রও দেখা গেলো না ম্যাচে। একদিকে ছিল লুইস এনরিকের তারুণ্যে ভরপুর দল পিএসজি আর অন্যদিকে সিমিওনে ইনজাঘির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দল ইন্টার মিলান।

তবে ফাইনালের শুরু থেকে তরুণদের গতির কাছে বারবার পরাস্ত হতে থাকে অভিজ্ঞ ডিফেন্স নিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত আসা ইন্টার মিলান।

খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলতে থাকে পিএসজি। প্রথম ১০ মিনিটেই তিনবার ইন্টার মিলানের ডি বক্সে ঢুকে পিএসজির খেলোয়াড়রা গোলের চেষ্টা করে যেতে থাকে। আর এই একতরফা আক্রমণের ফলাফলও পেয়ে যায় খুবই দ্রুত।

খেলার মাত্র ১২ মিনিটে পেয়ে যায় ১-০ গোলেরও লিডও। পিএসজির মিডফিল্ডের ভরসা ভিতিনিহার বাড়িয়ে দেওয়া বলে ভেঙে পড়ে ইন্টারের জমাট রক্ষণভাগ। ডি-বক্সের ভেতরে বাঁদিকে দুয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজে শট না নিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুঁজে নেন হাকিমিকে। একেবারে ফাঁকায় থাকা মরক্কোর এই ডিফেন্ডার খুব কাছ থেকে আলতো টোকায় করেন লক্ষ্যভেদ।

ইন্টার মিলানে খেলে পিএসজিতে যোগ দেওয়া হাকিমি অবশ্য এই গোল করার পরে উল্লাসে ফেঁটে পড়েন নি। বরং নীরবেই সতীর্থদের উল্লাসের কেন্দ্রে থেকে ইন্টার মিলান সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

এই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই ইন্টারের জালে জড়িয়ে যায় দ্বিতীয় গোল। তবে দলটি যখন আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই পালটা আক্রমণের আসে গোলটি।

খেলার ২০ তম মিনিটে কর্নার আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন নিকোলো বারেলা। তবে উইলিয়ান পাচো বল খেলায় রেখে বাড়ান খাভারাতস্খেলিয়াকে। জর্জিয়ান উইঙ্গারের পাস পেয়ে উসমান দেম্বেলে বামদিক দিয়ে পৌঁছে যান ডি-বক্সের কাছে। এরপর তিনি দেখেশুনে অন্যপ্রান্তে দুয়েকে দেন বল। তরুণ ফরাসি উইঙ্গারের ডান পায়ের শট প্রতিপক্ষের ফেদেরিকো দিমার্কোর পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের।

এই গোলের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন দুয়ে। মাত্র ১৯ বছর ৩৬২ দিন বয়সে তৃতীয় টিনএজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করলেন তিনি; আগের দুজন হলেন পাত্রিক ক্লুইভার্ট ও কার্লোস আলবের্তো।

এরপরে ইন্টার মিলান নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

তবে কর্নার থেকে পাওয়া দুইটি সুযোগ ছাড়া আর তেমন কিছু করতে পারে নি লাওতারো মার্টিনেজরা।

২৩তম মিনিটে কর্নার থেকে নেওয়া শটে ফ্রান্সেসকো আচেরবির হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৩৭তম মিনিটে মার্কাস থুরামের হেডও গোলবারের বাম পাশ দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

অবশ্য অন্যদিকে থেমে ছিল না পিএসজির আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা। খেলার ৪৪ তম মিনিটে গোলবারের সামনে ডেম্বেলে তালগোল না পাকালে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল পারিসিয়ানদের। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে দুয়ের নেওয়া শট অবশ্য লক্ষভ্রষ্ট হলে ২-০ গোলের ব্যবধানেই খেলা শেষ হয়।

ফাইনাল ম্যাচের প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলমুখে ১৩টি শট নিয়ে পিএসজির খেলোয়াড়রা লক্ষ্যে রাখে পাঁচটি। এই সময়ে ইন্টার মিলান দুইটি শট নেওয়ার চেষ্টা করলেও লক্ষ্যে ছিল না কোনটাই।

দ্বিতীয়ার্ধেও প্রায় একই রকমের খেলা দেখা যায়। এ সময় ইন্টার মিলান গোল পরিশোধের চেষ্টা করে গেলেও পরিকল্পনার অভাব ছিল স্পষ্ট।

এরই মাঝে খেলার ৬৩তম মিনিটে আরেকটি দুর্দান্ত গোলে ইন্টার মিলানের সব আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়।

এ সময় ভিতিনিহার আরেকটা থ্রু পাস ডি-বক্সে পেয়ে নিখুঁত শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ম্যাচ সেরা দুয়ে।

ঠিক তার ১০ মিনিট পরে মাঝমাঠ থেকে ডেম্বেলের বাড়িয়ে দেওয়া থ্রু পাস ধরে ক্ষিপ্রতায় ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন জর্জিয়ার ফরোয়ার্ড কাভারাৎস্খেলিয়া।

এই গোলের পরে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় পিএসজির শিরোপা জয়। আর তাই হয়তোবা দলটির কোচ লুইস এনরিকেও সাইডলাইন ধরে ছুটে গিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করা শুরু করেন।

২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেন লুইস এনরিকে। এরপর নানা উত্থান-পতনের মাঝ দিয়ে যাওয়া এনরিকের এমন উল্লাস অবশ্য জানান দেয়, তিনি আবার আরেকটা ভালো দল গড়ার পথে অনেক খানি এগিয়ে গেছেন যারা ইউরোপের ফুটবলের রাজত্ব করতে আসছে। কারণ ফাইনালে তিনি যে দলটিকে খেলান তা চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে বয়স বিবেচনায় তৃতীয় সর্বকনিষ্ট দল।

খেলার ৮৪ মিনিটে ইন্টার মিলান খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দলটির ভক্তদের চোখের জলে ভাসান আরেক তরুণ মিডফিল্ডার সেনি। ৮২ তম মিনিটে ফাবিয়ান রুইসের বদলে মাঠে নেমে পিএসজির হয়ে ম্যাচের পঞ্চম গোলটি করেন সেনি। অনেকটা দুরূহ কোণা থেকেই নেওয়া জোরালো শটে ইয়ান সোমারকে পরাস্ত করেন সেনি।

আর তাতেই শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে উঠে পিএসজির খেলোয়াড়রা।

খেলার শেষ দিকে আর তেমন কিছু না হওয়ার কারণে ইউরোপের ফুটবলের নতুন রাজা হিসেবেই মাঠ ছাড়ে পিএসজির খেলোয়াড়রা।

ফাইনাল ম্যাচে প্রায় ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে পিএসজি গোলের জন্য ২৩ শট নিয়ে আটটি লক্ষ্যে রাখতে পারে।

বিপরীতে ইন্টারের আট শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে, অবশ্য সেগুলোও তেমন ভীতি ছড়াতে পারেনি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস পিএসজিকে কিনে নেওয়ার পর থেকে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে একটি স্বপ্নের পেছনেই ছুটছিল তারা— চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি। এর আগে একবার ফাইনালে পৌঁছালেও শিরোপা অধরাই থেকে যায় দলটির।

চলতি মৌসুমেও প্রাথমিক পর্বের প্রথম পাঁচ রাউন্ডে মাত্র একটিতে জিতে (বাকি চার ম্যাচের তিনটিতে হার ও একটি ড্র) এই পিএসজিই চলে গিয়েছিল বিদায়ের দুয়ারে।

সেখান থেকে টানা তিন ম্যাচ জিতে প্লে-অফে জায়গা করে নেয় তারা। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা।

ওই প্লে-অফে ব্রেস্তকে দুই লেগ মিলিয়ে ১০-০ গোলে বিধ্বস্ত করে তারা। এরপর একে একে লিভারপুল, অ্যাস্টন ভিলা ও আর্সেনালকে হারিয়ে ফাইনালের মঞ্চে জায়গা নেওয়া এবং শিরোপা লড়াইয়ে এমন দাপুটে পারফরম্যান্সে নতুন এক ইতিহাসের জন্ম দিল লুইস এনরিকের দল পিএসজি।

আর এই শিরোপা জয়ের দলে সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ মৌসুমে 'ট্রেবল' জয়ের স্বাদও পেল দলটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগে তারা জিতেছে ফরাসি লিগ ওয়ান ও ফরাসি কাপ।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0