Logo

সাংবাদিকদের ভীতি প্রদর্শন ও আইনি হয়রানি করা হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি

সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে কমপক্ষে ৯১ জন সাংবাদিককে হয়রানি, লাঞ্ছিত বা ভয় দেখানো হয়েছে-যা এপ্রিলের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রতীকী ছবি: সাংবাদিক

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: জাতি যখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা উপভোগ করছে বলে হচ্ছে তখনও সাংবাদিকরা সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন ও আইনি হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) সর্বশেষ পরিসংখ্যান ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।

সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে কমপক্ষে ৯১ জন সাংবাদিককে হয়রানি, লাঞ্ছিত বা ভয় দেখানো হয়েছে-যা এপ্রিলের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩৩ জনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, সাতজনকে হুমকি এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ৪৮ জন সাংবাদিককে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছে। যদিও কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় কিন্তু এই মামলা ও গ্রেপ্তার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা আইনি ব্যবস্থাকে আড়াল করা হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এই প্রবণতা গত জুলাইয়ের নৃশংসতার জন্য সন্দেহজনক অভিযোগের মাধ্যমে সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অতীতের ঘটনার সঙ্গে মিল যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, আমরা বারবার এই ধরণের বিরক্তিকর আইনি প্রবণতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছি। এই ধরণের সন্দেহ ও শোষণমূলক মামলার শিকারদের মধ্যে কেবল সাংবাদিকরাই নন; বরং ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শিক্ষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ অন্যান্য পেশাজীবীরাও রয়েছেন। একজন মুদি দোকানদারকে মিথ্যাভাবে খুনের মামলায় মৃত ঘোষণা এবং ৬৯ বছর বয়সী একজন প্রাক্তন অধ্যাপককে হত্যাচেষ্টার মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে যে পচন কতটা দূর পর্যন্ত পৌঁছেছে।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত আরেকটি দৃষ্টান্ত টেনে বলা যায়. ২৬ জন সাংবাদিক এবং অন্যান্যদের চট্টগ্রামে বিএনপিপন্থী একজন আইনজীবীর দায়ের করা খুনের চেষ্টার মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই মামলাটি পুরোপুরি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল। পুলিশ বা অভিযুক্তদের কাছ থেকে সামান্য প্রমাণও পাওয়া যায়নি, সকলেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই দৃষ্টান্ত সত্ত্বেও এ ধরণের মামলা নিয়মিত দায়ের বা তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রবণতা আমরা ভয়ানকভাবে লক্ষ্য করছি।

গত ৩ মে আমাদের দৈনিকে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ, তখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৬৬ জন সাংবাদিককে জুলাইয়ের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই ধরনের

আইনি আক্রমণ কেবল সাংবাদিকদের বিপন্ন করে না, একইসঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও ক্ষুণ্ন করে। সেইসঙ্গে তথ্য প্রাপ্তির জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকেও লঙ্ঘন করে। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর ভয়ানকভাবে কালো ছায়া ফেলছে।

আমরা আবারও কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিকদের ওপর প্রতিশোধমূলক মামলার পাশাপাশি শারীরিক সহিংসতা এবং ভয় দেখানো থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার অন্যদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য; যেমন মব সহিংসতা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা। এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী মে মাসের পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এগুলিও গুরুতর অধিকার লঙ্ঘন, এর জরুরি প্রতিকার হওয়া উচিত।

তবে বলাই বাহুল্য যে, সরকার একা এই পরিস্থিতি ঠিক করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলিকেও তাদের কর্মীদের-যারা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত তাদের কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। বিশেষ করে বিএনপিকে তার বিপথগামী কর্মী এবং নেতাদের নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাফ্লো/এনআর

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0