Logo

টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কেমন ছিলেন বিরাট কোহলি?

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছরের দীপ্তিময় অধ্যায়কে বিদায় জানিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন।

বিরাট কোহলি

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: ভারতীয় ক্রিকেটের আধুনিক মহীরূহ বিরাট কোহলি অবশেষে তুলে রাখলেন সাদা পোশাক। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছরের দীপ্তিময় অধ্যায়কে বিদায় জানিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন। এবার শুধু একদিনের ক্রিকেটেই তার আরাধ্য লড়াই। টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আগেই, এবার লাল বলেও ইতি টানলেন নীরব অভিভাষণে। তবে বিদায়ের এই মুহূর্তে স্মৃতির পাতায় এক বিশেষ অধ্যায় হয়ে থাকবে বাংলাদেশ। এশিয়ার আরেক ক্রিকেটপ্রেমী জাতির বিপক্ষে কোহলির লড়াই যেন কাব্যিক দ্বন্দ্ব। তার বিদায়লগ্নে বাংলাদেশের নামটি আলাদাভাবে উচ্চারিত হয় স্মৃতিতে, পরিসংখ্যানে ও সম্মানে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে বিরাট কোহলি মোট ৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এই ৮ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে তিনি করেছেন ৫৩৬ রান। গড় দাঁড়ায় প্রায় ৪৯, যা তার ক্লাস ও ধারাবাহিকতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এই রানগুলো নিছক পরিসংখ্যান নয়। প্রতিটি ইনিংসেই ছিল ধৈর্য, প্রতিক্রিয়া ও শৈল্পিকতা। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ২০৪। যা আসে হায়দরাবাদে ২০১৭ সালে। সে বছর প্রথমবারভারতের মাটিতে কোনো সিরিজ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তার ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের নামটা নিশ্চয়েই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০১৯ সালের গোলাপী বলের টেস্ট ম্যাচের জন্য। সেবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ঐতিহাসিক দিবারাত্রির ম্যাচটিতে তিনি করেছিলেন ১৩৬ রান। ঐদিন তার ব্যাট যেন গর্জে উঠেছিল শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হয়ে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ৫ ইনিংসের দুটিতেই সেঞ্চুরি। শেষটি কলকাতায়। আর সেটাই যেন কাল হয়েছিল তার ক্রিকেটে। যে কারণে বাংলাদেশি পেসার ইবাদত হোসেনের নামটাও আমৃত্যু স্মরণে রাখবেন কোহলি। কেননা ঐ ম্যাচে তার বলে আউট হয়ে ব্যাটে ছন্দ হারিয়েছিলেন। ৩ বছর তার ব্যাটে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও চারটি টেস্ট খেলেছেন। তবে কোনোবারই ফিফটিরও দেখা পাননি।

বাংলাদেশের কোনো বোলারই এককভাবে কোহলির বিপক্ষে সফল হতে পারেননি। ১৩ ইনিংসে দুবার অপরাজিত থাকা কোহলির উইকেট নিতে পেরেছেন ৮ বাংলাদেশি বোলার। যার মধ্যে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুবার করে উইকেট নিয়েছেন। তবে ২০১৫ সালে ফতুল্লায় টাইগারদের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমে আউট হয়েছিলেন তিনি লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনের বলে। এরপর আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী, এবাদত, তাসকিন ও হাসান মাহমুদের বলে একবার করে তিনি আউট হয়েছেন।

তবে কোহলি যেন বোলিংয়ে তাইজুল ইসলামকে পেলে খুব খুশি হতেন। পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলে। ৪ ম্যাচ দেখা হয়েছে দুজনের। দুবার আউট হলেও তাইজুলের বিপক্ষে ২৪৩ বল মোকাবিলা করে কোহলি করেছেন মোট ১৪৮ রান। এরমধ্যে অবশ্য ১৫৩টি বলই ডট। গড় ৭৪।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট সিরিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষেও এটা কোহলির ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ ছিল।

সিরিজের দুই টেস্টের ৪ ইনিংসে কোহলি মোট ৯৯ রান করেন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৭। সিরিজ শেষে ও চলাকালে অবশ্য তার ব্যাটিং নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। তবে তার ব্যাটিং ছাপিয়ে রাজকোট টেস্ট শেষে কোহলি নিজের স্বাক্ষরিত একটি ব্যাট উপহার দেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি সাকিব আল হাসানকে। দুজনের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সম্মানজনক সম্পর্কের স্মারক হয়ে সেই ব্যাট হয়ে থাকলো এক মধুর মুহূর্ত।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামলে তার চোখে ঝরে পড়ত সম্মান আর প্রতিযোগিতার মিশেল। একবার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর ছোট দল নয়। তারা সাহসী, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দুর্দান্ত স্কিলফুল। তাদের হারানো মানে এখন সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ জয়।’

বিরাট কোহলি যখন টেস্ট থেকে বিদায় নিলেন। তখন শুধুই একটি ক্যারিয়ার শেষ হয়নি, শেষ হয়েছে সময়ের সাক্ষ্য হয়ে ওঠা এক অধ্যায়।

বাংলাফ্লো/এসও

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0