জেলা প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী মামুন মিয়া (৩৫) মারা গেছেন।
এছাড়া সাব্বির হোসেন খোকা নামের ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) মধ্যরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ মামুন মিয়ার মৃত্যু হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত মামুন মিয়া ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদলের ছোট ভাই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল পুলিশ মোতায়েন ও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মামুন মিয়া নামে ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বুধবার (১১ জুন) দুপুরে রূপগঞ্জের মাঝিপাড়া এলাকায় মামুনের লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সোনারগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল মামুন মিয়ার। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে তুলে দিয়ে তাদের থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের সময় ছোট্ট দুই সন্তানের কপালে চুমু খেয়েছিলেন। নিজেও কপাল বাড়িয়ে নিয়েছিলেন সন্তানের চুমু। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলিবিদ্ধ হোন মামুন।
দুই সন্তানকে নিয়ে বিলাপ করতে করতে মামুনের স্ত্রী ইমা আক্তার বলেন, ‘এই বিদায় যে শেষবিদায় হইব তা জানলে তো আমি তার হাত ছাড়ি না খোদা। আমি তো তারে চোখের আড়াল করতাম না। উনি তো খুনের রাজনীতি করতেন না। কোন পাপের শাস্তি পাইলাম আমরা। কোন কারণে আমার মাসুম বাচ্চাদের এতিম কইরা দিল।’
এদিকে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জাহিদুল ইসলাম বাবুকে ছাত্রদল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (১১ জুন) সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সাব্বির হোসেন খোকাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তাকে ছাড়িয়ে নিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য শান্ত ঘটনাস্থলে যান। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে এক পক্ষের লোকজন অপর পক্ষের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন।
এতে ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদলের ছোট ভাই মামুন গুলিবিদ্ধ হন। এসময় বাদলের লোকজন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সাব্বির হোসেনকে যুবদল নেতা বাদল ও তার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সাব্বির হোসেন খোকার ওপর নির্যাতন চালায় এবং হাত পা ভেঙে দেয়।
পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা গুলিবিদ্ধ মামুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মামুন মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মধ্যরাতে চিকিৎসকরা থেকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় জনমনে চরম আতঙ্কে সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে, মামুন মিয়ার মৃত্যুর সংবাদে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা আসামি পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা বাদল মিয়া বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সাব্বির হোসেন খোকাকে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দেয়। আর সাব্বির খোকাকে ছাড়িয়ে নিতে জাহিদুল ইসলাম বাবু এলাকাবাসীর ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তার ছোড়া গুলিতে বাদলের ভাই মামুন মিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের রাজনীতি করায় এবং অপর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর পক্ষে কাজ না করায় আমাকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হচ্ছে।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0