বাংলাফ্লো স্পোর্টস
ঢাকা: নিয়মিত টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আরব আমিরাতের খেলার ফলাফল একতরফা হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-২০ ম্যাচে যখন সেই আরব আমিরাতই এক সময় জয়ের জন্য ১৯২ রানের লক্ষ্যে নেমে মাত্র ১০ ওভার ২ বলে দলীয় শতরান পূরণ করে তখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে দেখা দেয় শঙ্কা।
আরব আমিরাতের আসিফ খান নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের ১৩ তম ওভারের শেষ তিন বলে যখন পরপর ছক্কা হাঁকায় তখন পিনপতন নিস্তব্দতা শারজাহ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা দেখতে আসা ক্রিকেট ভক্তদের। তবে ১৪ তম ওভারে তানজিম সাকিবের প্রথম বলে সেট হয়ে যাওয়ার ব্যাটসম্যান রাহুল চোপড়া আউট হয়ে গেলে খানিকটা বিপদ কাটে বাংলাদেশের।
শেষ পর্যন্ত র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা আরব আমিরাতকে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখার মতো শক্তিশালী করে তুললেও খেলার নিয়ন্ত্রণ দেয় বাংলাদেশ। কিছুটা শঙ্কা জাগাচ্ছিল ক্যাচ মিসের মহড়া।
ইনিংসের শেষ বলে আরব আমিরাতের শেষ ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে ম্যাচ জয়ীর হাসি ফুটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
এ দিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ওপেনার পারভেজ ইমনের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ তুলে ৭ উইকেটে ১৯১ রান। পারভেজের সেঞ্চুরির ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান এসেছে হৃদয়ের ব্যাট থেকে। আরব আমিরাতের নির্বিষ বোলিংয়ের বিপক্ষেও ব্যাটারদের কাছ থেকে সাপোর্ট না পাওয়ায় বাংলাদেশের রান ২০০ হয়নি।
তবে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৯১ রানের সংগ্রহ জয়ের জন্য যথেষ্ঠই ভাবছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু আরব আমিরাতের ব্যাটারদের মনে বোধ হয় ছিল ভিন্ন ভাবনা। আর সেটার প্রভাব তাদের টপ অর্ডার ব্যাটারদের কাছ থেকে দেখা যায়।
বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে আরব আমিরাতের ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং ভাবিয়ে তুলে বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের।
প্রথম ওভারে পাঁচ রান তুললেও তৃতীয় ওভার শেষে আরব আমিরাতের রান সংখ্যা দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৩৮ রান।
চতুর্থ ওভারের আরব আমিরাতের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। হাসান মাহমুদের করা ওভারটির পঞ্চম বলে মোহাম্মদ জোয়াইব আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ৯ রান করে নাজমুল হাসান শান্ত’র হাতে ক্যাচ দিয়ে।
তারপরের ওভারেই ওয়ান ডাউনে খেলার জন্য ক্রিজে আসা আলিশান শারাফুর ব্যাটের কোণায় লাগা বল উইকেট রক্ষক জাকের আলীর গ্লাভসে জমা হয়। মুস্তাফিজের এটি ছিল ম্যাচে প্রথম উইকেট।
পরপর দুই ওভারে দুই ব্যাটার ফিরে গেলেও থামে নি আরব আমিরাতের রানের চাকা।
প্রথম পাঁচ ওভারেই দলটি দুই উইকেটের বিনিময়ে তুলে নেয় ৪৬ রান।পরের দুই ওভারে আরও যোগ করে আরও ২৫ রান।
এরপরে ১১ ওভার পর্যন্ত দুই উইকেটের বিনিময়েই ১০৩ রান সংগ্রহ করে আরব আমিরাতের ব্যাটাররা।
এ সময় মূলত রাহুল চোপড়াকে নিয়ে ৪২ বলে ৬২ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তুলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।
১২ তম ওভারে সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে তানজিম হাসান সাকিব। ফেরার আগে ওয়াসিম করেন ৩৯ বলে ৫৪ রান।
এরপরে ম্যাচের ১৩ তম ওভারে মাহাদী হাসানের পর পর তিন বলে তিনটি ওভার বাউন্ডারি হাকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন আরব আমিরাতের আসিফ খান। এই ওভারেই ২৫ রান সংগ্রহ করে আরব আমিরাতের ব্যাটাররা।
এরপরের ওভারের আরেক প্রান্তে সেট হয়ে যাওয়া ৩৫ রান করা রাহুলকে সাজঘরে ফেরান তানজিম।
১৪ ওভার শেষে আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেটের বিনিময়ে ১৩২ রান।
ম্যাচ জয়ের জন্য দলটির প্রয়োজন ছিল ৩৬ বলে ৬০ রান। বর্তমান বিশ্বের টি-২০ ফরম্যাটে যা না করতে পারাটা আসলে একটা আক্ষেপের বিষয়।
কিন্তু এখান থেকেই মূলত ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
ধ্রুব প্রশারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের দিকে ম্যাচে ফিরিয়ে তানভীর ইসলাম। ৭ বলে ৩ রান করে আরব আমিরাতের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে দিরেন তিনি।
এরপরে মুস্তাফিজুর বোলিংয়ে ফিরে নিজের অভিজ্ঞতার ছাপ রাখেন বোলিংয়ে। ফলে চাপ বাড়তে থাকে আরব আমিরাতের ব্যাটারদের।
অন্যপ্রান্তে হাসান মাহমুদের ওভারে চার ও ছক্কা মেরে জয়ের আরব আমিরাতের জয়ের আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন আসিফ খান।
কিন্তু সেই ওভারেই অর্থাৎ ১৭ তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন সঞ্চিত শর্মা।
আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ছয় উইকেটের বিনিময়ে ১৫৪।
ম্যাচের ১৮ তম ওভারের আরব আমিরাতের সপ্তম ও নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ম্যাচে চার ওভার বোলিং করে ১৭ রান দিয়ে তিনি এই উইকেট দুইটি নিজের সংগ্রহের পালকে যোগ করেন।
আরব আমিরাতের তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ৩৫ রান। এমন অবস্থায় লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের স্ট্রাইক না দিয়ে নিজেই জয়ের আশায় চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন আসিফ খান।
তবে সেই আশার বাধ ভাঙে ১৯ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। হাসান মাহমুদের করা বলটি উড়িয়ে মারতে যান আসিফ খান। তবে বল গিয়ে পৌছায় তাওহিদ হৃদয়ের হাতে। তিনটি চার ও চারটি ছক্কা মেরে ২০ বলে ৪২ রান করে সাজঘরে ফিরেন বাংলাদেশের জয়ের পথে বোলারদের কাঁটা হয়ে থাকা আসিফ খান।
এরপর অবশ্য আর আরব আমিরাতের ব্যাটাররা ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ পায় নি।
তবে তাদের দিকে সে সময়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ভুলে নি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ক্যাচ মিস হলেও সেটার জন্য বেশি ভুগতে হয় বাংলাদেশকে।
নিয়মিতভাবে যার বোলিং নিশ্চিন্তে খেলে গেছে আরব আমিরাতের ব্যাটাররা সেই মেহেদীর করা নিজের ও ইনিংসের শেষ ওভারেই দুই উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় আরব আমিরাত।
বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতে ২৭ রানে।
পারভেজের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের ৭ উইকেটে ১৯১ রান
আগের ৭ ইনিংসে পারভেজের সবমিলিয়ে করেছিলেন ৮৮ রান। আজ এক ইনিংসেই করেছেন ১০০। তাঁর ৫৩ বলের এই সেঞ্চুরি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয়। এর আগে ওমানের বিপক্ষে ২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল।
এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য ভালো সূচনা হয় নি বাংলাদেশের।
১০ রানের বেশি করতে পারেননি ওপেনার তানজীদ তামিম। লম্বা হয়নি পারভেজ ইমনের সঙ্গে জুটির। তবে তাতে কি? এক প্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের টাইগারদের ইনিংস যেভাবে টেনে নিয়ে গেছেন ইমন তাতেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৯১। আর এই সংগ্রহের পথে বড় অবদান ওপেনার হিসেবে নেমে ইমনের প্রথম শতরানের ইনিংস।
আরব আমিরাতের অভিষিক্ত মতিউল্লাহ খানের আউটসাইড অফের বলে খোঁচা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ তামিম। একটি করে চার-ছয় হাঁকান তানজীদ। বাউন্ডারি ছাড়া কোনো রান আসেনি তার ব্যাট থেকে।
এরপরে ৮ বলে ১১ রান করে বিদায় নিলেন অধিনায়ক লিটন। জাওয়াদুল্লাহর নিচুতে যাওয়া ইয়র্কারে পরাস্ত হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তানজীদের বিদায়ের পর ইমনের সঙ্গে জুটিতে রান বাড়ছিল। কিন্তু সেটি স্থায়ী হয়নি।
হৃদয় পরপর ছক্কা-চার হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি হৃদয়। পারশারের আউট সাইড অফের বলে ক্যাচ তুলে দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। ১৫ বলে ২০ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
এক প্রান্তে ইমন ঝড় তুলছেন অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশ। হৃদয়ের পর ক্রিজে এসে দ্রুত ফেরেন মেহেদী। জাওয়াদুল্লাহর বলে খোঁচা দিয়ে মেহেদী ফেরেন সাজঘরে। ৫ বলে ২ রান করেন এই ব্যাটার।
আগের ৭টি-টোয়েন্টিতে কোনো ফিফটি ছিল না। আমিরাতের বিপক্ষে অষ্টম টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেই দেখা পেলেন সেঞ্চুরির। পারভেজ ইমন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন মাত্র ৫৩ বলে। এর আগে ফিফটি করেন ২৮ বলে। ৫টি চার ও ৯টি ছক্কায় সাজানো ছিল সেঞ্চুরির ইনিংসটি। সেঞ্চুরির পরের বলেই ফেরেন সাজঘরে।
ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করছিলেন। এক প্রান্তে উইকেট পড়েলেও দমে যাননি ইমন। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি ছিল শুধু তামিমের। ওমানের বিপক্ষে ২০১৬ সালে ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। ৯ বছর পর সেটি ভাঙলেন ইমন।
এর পাশাপাশি টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এখন পারভেজের। আরব আমিরাতের বিপক্ষে আজ পারভেজ এখন পর্যন্ত ছক্কা মেরেছেন ৮টি, যা সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল রিশাদের, ৭টি। ৬টি ছক্কা দুইবার মেরেছিলেন জাকের। এই জাকের আজ ১৩ বলে ১৩ করে আউট হন।
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে ১৯ মে আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশের টাইগাররা।
বাংলাফ্লো/এসও
Comments 0