Logo

জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য ৮ প্রকল্প: বাজেট ৩৮১৩ কোটি টাকা

প্রকল্পগুলোর মূল লক্ষ্য শহীদদের পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই, আহতদের জীবনে নতুন আলো, অর্থনৈতিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানসিক পুনরুদ্ধার এবং আন্দোলনের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।

ফাইল ছবি

বাংলাফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মান জানাতে এবং পুনর্বাসনের জন্য আটটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

ছয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই উদ্যোগগুলো আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পগুলোর মূল লক্ষ্য শহীদদের পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই, আহতদের জীবনে নতুন আলো, অর্থনৈতিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানসিক পুনরুদ্ধার এবং আন্দোলনের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে সেগুলো অনুমোদন ও বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই সরাসরি এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।       

স্থায়ী আবাসন প্রকল্প : জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও গুরুতর আহতদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যয়ের প্রকল্প নিচ্ছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। মোট দুই হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর মিরপুরের সেকশন-৯ ও সেকশন-১৬ এলাকায় নির্মাণ করা হবে ২৫টি ১৪ তলা ভবন। ২৫টি ভবনে মোট ২৬০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি শহীদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট।

গুরুতর আহত (ক্যাটাগরি-এ) ব্যক্তিরা পাবেন ১০০০ বর্গফুট ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটগুলো দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। প্রকল্প এলাকায় থাকবে স্কুল, মসজিদ, বাজার, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ এবং গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা। কাজ শুরু হবে এ বছর থেকেই, আর ফ্ল্যাট হস্তান্তরের লক্ষ্য ২০২৯ সালের জুন মাসের মধ্যে।

জানা গেছে, প্রকল্পটি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা রয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহমেদ বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনে গণপূর্ত থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে। সেটা নিয়ে আগামীকাল পিইসি সভা আছে। প্রকল্প প্রস্তাবে কোনো অসংগতি আছে কি না সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখব। সব ঠিক থাকলে একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে, যার নাম ‘আন্দোলনে ভুক্তভোগীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মনির্ভরতা’। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব মানুষ আন্দোলনের সময় শারীরিক, মানসিক বা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ভাতা, চিকিৎসা সহায়তা, কাউন্সেলিং এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

নারীদের জন্য পৃথক সহায়তা : আন্দোলনের সময় নারীরা যেসব বিশেষ ঝুঁকির মুখে পড়েছিলেন, তা বিবেচনায় নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। নারীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনরায় সমাজে অন্তর্ভুক্তির নানা কার্যক্রম নেওয়া হবে এই প্রকল্পে। দায়িত্বে থাকবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।

ইতিহাস সংরক্ষণে দুই প্রকল্প : জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় দুটি প্রকল্প নিচ্ছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র আর্কাইভ ৪৯ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিডিও, ছবি ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আন্দোলনের দলিল সংগ্রহ করবে। অন্যদিকে গ্রন্থাগার ও পুরাতত্ত্ব অধিদপ্তর ৪৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ‘ডিজিটাল মৌখিক ইতিহাস সংরক্ষণাগার’ তৈরি করবে। যেখানে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ ও অভিজ্ঞতা সংরক্ষণ করা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

আত্মনির্ভরতা ও কর্মসংস্থান : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ‘আহত ও শহীদ পরিবারের আত্মনির্ভরতা ও কর্মসংস্থান’ প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষাগত ও পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে শুরু করার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ ও ব্যবসা সহায়তাও থাকবে।

শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই আন্দোলনে শহীদদের কবরস্থানে স্মৃতিফলক স্থাপন করবে। ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

এই আটটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।

বাংলাফ্লো/আফি

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0