জেলা প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুরে মেশিনের (কম্বাইন হারভেস্টার) সাহায্যে কাটা হচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমির ধান। এমন খবর পেয়ে সেই ধান কাটার মেশিন দেখতে ছুটে যান নারীরা। ধান কাটার এমন অত্যাধুনিক মেশিন দেখতে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন ১১ নারী। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় আহত নারীদের।
এ ঘটনায় গেল মাসে এসআই আজিম আলীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়েছে। একই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার প্রত্যাহার করে দুপুর ১২টার মধ্যে রাজশাহী রিজার্ভ ফোর্সে যোগদান করতে গোমস্তাপুর থানার ওসি রইস উদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু লাঠিচার্জ নয়, ঘটনাস্থলে পুলিশের পক্ষ থেকে ছোড়া হয় রাবার বুলেট। অভিযোগ রয়েছে, গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইস উদ্দীনের উপস্থিতিতে ও নির্দেশে এই লাঠিচার্জে নেতৃত্ব দেন একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আজিম।
স্থানীয়রা জানান, কায়েমপুর ইউনিয়নের জগদিসপুর মৌজায় ৩০-৪০ জনের ১৮০ বিঘা জমি রয়েছে। তবে এসব জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলে আসছে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বেগপুর গ্রামের আজগর আলীসহ কয়েকজন ব্যক্তির।
গত ১ মে সকালে এসব জমিতে যন্ত্র দিয়ে ধান কাটছিলেন। এ সময় এলাকায় নারীরা যন্ত্র দিয়ে কীভাবে ধান কাটা হচ্ছে তা দেখতে গিয়েছিলেন। এতেই বাধে বিপত্তি। পুলিশ ধান কাটা বন্ধ করতে গিয়ে নারীদের ওপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১১ জন নারী।
শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা বইফুল বেগম বলেন, ‘সকালে জানতে পারি এলাকায় যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হবে। সকালের সব কাজ শেষ করে বের হয়েছিলাম যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা দেখতে। কিন্তু অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পরে হঠাৎ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি এসে আমাদের আটকে দেয়। আমরা নাকি ধান কাটতে গিয়েছি এমন অভিযোগ
তুলে আমাদের মারধর শুরু করে পুলিশ। এমনকি গুলিও চালানো হয় আমাদের লক্ষ করে। এ সময় আমার পায়ে আঘাত লাগে। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চার দিন ভর্তি ছিলাম। এখনো হাঁটতে পারছি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমানের স্ত্রী মমিনা বেগম বলেন, ‘গোমস্তাপুর থানার এসআই আজিম আলী, এসআই আতিক ও এএসআই জুয়েল রানা আমাদের কোনো কথা বলতে না দিয়ে মারধর করে। মারধরের সময় উপস্থিত ছিলেন গোমস্তাপুর থানার ওসি রইস উদ্দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশ ছিল, তারা আমাদের কিছুই বলেনি। কিন্তু পুরুষ পুলিশ আমাদের এভাবে মারধর করেছে। এমনকি অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে মারধর করেছে। এ ঘটনার আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
সুফিয়া বেগম নামের আরও এক আহত নারী বলেন, ‘জমি নিয়ে দুপক্ষের ঝামেলা চলছে, বিষয়টি আমরা জানতাম না। আমরা সবাই ধান কাটার যন্ত্র দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ৬০-৭০ জন পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমরা ভয়ে পালাতে থাকি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমাদের মারধর করেছে। এটি সত্যি লজ্জাজনক।’
গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইস উদ্দিন লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘কায়েমপুর ইউনিয়নের জগদিসপুর মোজায় ১৮০ বিঘা জমি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছিল অনেক আগে থেকে। পরে আদালতে মামলা করে জমির মালিকানা পেয়েছেন রফিকুল ইসলামের পক্ষ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করেছেন আজগর আলীর পক্ষের লোকজন। গত ১ মে এসব ধান কাটছিল রফিকুল ইসলামের কিছু লোক। বিষয়টি জানতে পেরে ধান কাটা বন্ধের জন্য ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দেন স্থানীয় কয়েকজন নারী। তাই তাঁদের শুধু ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কাউকে মারধর করা হয়নি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, ‘ধান কাটা নিয়ে নারীদের পুলিশের পুরুষ সদস্যরা লাঠিচার্জ করেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। সেখানে জমিজমা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একাধিক মামলাও হয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছে।’
ওসি রইস উদ্দিন ও এসআই আজিম আলীকে পুলিশ লাইনে ক্লোজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথাটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এত দিনের রেশ এখন পর্যন্ত কেন থাকবে। তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে। আর পুলিশের পুরুষ সদস্য হয়ে নারীদের লাঠিচার্জের কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0