বাংলাফ্লো স্পোর্টস
ঢাকা: হিথ স্ট্রিক, এলিস্টার ক্যাম্পবেল, গ্রান্ট ফ্লাওয়ারদের সেই জিম্বাবুয়ে দল এখন আর নেই। এরপরে একটা সময় আসে যখন তাদের বলে কয়েই হারাতো বাংলাদেশ। কিন্তু সেই দিনও সম্ভবত হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে।
অন্তত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটের প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তাই বলছে। ধুকতে থাকা বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে শক্তিশালী অবস্থায় আছে জিম্বাবুয়ে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা ছিল ১১২ রানের লিড। হাতে উইকেট ছিল আরও ৬টি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৩ বলে ৬০ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন, ওপাশে ৬০ বলে ২১ রান করে অপরাজিত আছেন জাকের আলী অনিক। এমন পরিস্থিতি থেকে যে কোনো দলই চাইত পুঁজিটাকে নিদেনপক্ষে ২৫০ এর ওপরে নিয়ে যেতে। বাংলাদেশও তাই চাইছিল।
তবে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য ছিল পুরোপুরি উল্টো। ব্লেসিং মুজারাবানি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ২০০ রানের পুঁজিও নিতে দিতে চায় না জিম্বাবুয়ে। শেষমেশ সফরকারীরাই কথা রেখেছে। বাংলাদেশকে ২০০ রানের লিড নিতে দেয়নি। দল অলআউট হয়েছে ২৫৫ রানে, তাতে মোটে ১৭৩ রানের পুঁজি নিয়ে ইনিংস শেষ করেছে স্বাগতিকরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বৃষ্টির কারণে সকালে নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হতে পারেনি। শুরু হয়েছে সকাল ১১টায়। তবে এরপর থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা ক্রমে খারাপই হতে শুরু করে।
দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হন ৬০ রানে অপরাজিত নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দিনের সঙ্গে আর কোনো রানই যোগ করতে পারেননি নিজের খাতায়। শিকার বনে যান মুজারাবানির।
তাতে শান্তরও দোষ আছে বৈকি! অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট পিচ বলটা পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেটা লিডিং এজ হয়ে উঠে যায় ওপরে। ফাইন লেগে থাকা ভিক্টর নিয়াউচির হাতে গিয়ে জমা পড়ে বলটা।
উইকেটে শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মুজারাবানির গতির কাছে পরাস্ত হয়ে তিনি ক্যাচ দেন গালিতে থাকা ব্রায়ান বেনেটের হাতে। আউট হন ১৫ বলে ১১ রান করে। মুজারাবানি তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফাইফার।
এর এক ওভার পর তাইজুল আউট হন রিচার্ড এনগারাভার শিকার হয়ে। তিনি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে থাকা মায়াভোর হাতে। ফলে দিনের শুরুর ৬ ওভারে তিন উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।
এরপর হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে জাকের জুটি গড়েছিলেন। যদিও জাকেরের অ্যাপ্রোচ নিয়ে কথা উঠতেই পারে। ওভারের তৃতীয়-চতুর্থ বলে নির্দ্বিধায় স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন টেল এন্ডার হাসানকে। ৫০ এরও বেশি বল খেলে সে আস্থার প্রতিদান অবশ্য দিয়েছেন হাসান, কিন্তু যেভাবে তিনি আউট হয়েছেন শেষে, তা তার সঙ্গী ‘শেষ স্বীকৃত ব্যাটার’ জাকেরের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিতেই পারে।
৯১ বলে ৩৫ রানের জুটিটা শেষ হয় অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে হাসান মিড অফে ক্যাচ দিলে। এরপর আরেকটু হলে সে ওভারেই ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ইনিংস শেষ করে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের। খালেদ আহমেদকে পরের বলে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিকটা হয়ে গেলে সে ওভারে শেষ হতো বাংলাদেশের ইনিংস। তবে নাহিদ রানা শেষ বলটা ঠেকিয়ে তা হতে দেননি।
তাতে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে মোটে ৭ রানই। জাকের আলী রিচার্ড এনগারাভার পরের ওভারে এক ছক্কাসমেত আনেন ৭ রান, তবে সে ওভারেও তৃতীয় বলে তিনি স্ট্রাইক ফেরত দেন টেল এন্ডার নাহিদকে। যদিও নাহিদ তার কাজটা ভালোভাবেই সেরেছেন, সে ওভারটা শেষ করেছেন কোনোরকম বিপদ ছাড়াই।
এরপর আক্রমণে আসেন মুজারাবানি। তার শিকার বনে যান জাকের। ৫৮ রানের ইনিংসটা তার শেষ হয় কাউ কর্নারে নিক ওয়েলশের হাতে ক্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশ ইনিংস শেষ করে ১৭৩ রানের লিড নিয়ে।
বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু?
সিলেটে টানা বৃষ্টির ফলে উইকেট কতটা ভেঙেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই ১৭৩ রানের পুঁজিও যথেষ্ট কি না, তা নিয়েও আছে সন্দেহ। তবে এই পুঁজি নিয়ে জিততে হলে বাংলাদেশকে ইতিহাসই গড়তে হবে। শেষ ইনিংসে ১৭৩ রানের পুঁজি নিয়ে যে কখনোই জেতেনি বাংলাদেশ!
শেষ ইনিংসে ২০০ রানের কম পুঁজি নিয়ে জেতার নজির বাংলাদেশের একটাও নেই। সবচেয়ে কম রানের পুঁজি নিয়ে জেতার ইতিহাস গড়েছে ২০১৮ সালে। সেবার চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০৩ রানের পুঁজি নিয়ে ৬৪ রানের জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সিলেট টেস্টে জিততে হলে সে ইতিহাসটাকে নতুন করে লিখতে হবে দলকে।
এর চেয়ে কম রান নিয়ে জেতার নজির অবশ্য ক্রিকেটে আছে বেশুমার। এমনকি দুই অঙ্কের পুঁজি নিয়েও জেতার কীর্তি আছে দুটো। চলতি শতাব্দীতে এমন কিছু এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই দেখা গেছে। ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৯৯ রানের লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি দলটা। অলআউট হয়েছিল ৬৫ রানে।
ইতিহাস অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও কথা বলছে। নিজেদের দীর্ঘ ইতিহাসে জিম্বাবুয়ে কখনোই ১৬২ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি। আজ তাদের লক্ষ্যটা তার চেয়েও ১২ রান বেশি।
সিলেটের ইতিহাসটাও কথা বলছে বাংলাদেশের পক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে এই মাঠে গড় রান হচ্ছে ১৭৭। সর্বোচ্চ রান ১৮২। এখন পর্যন্ত সিলেটে হয়ে যাওয়া তিন টেস্টের কোনোটিতেই রান তাড়া করে সফল হয়নি কোনো দল। ফলে এই তথ্যটাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই কথা বলছে এখানে।
বাংলাদেশ কখনো ২০০’র কম পুঁজি নিয়ে জেতেনি, জিম্বাবুয়ে যখন ১৬২’র বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি। বাংলাদেশের ১৭৩ রানের পুঁজি যেন সিলেটে নামিয়ে আনল ইররেসিস্ট্যাবল ফোর্স প্যারাডক্সকে। যখন আনস্টপ্যাবল ফোর্স মুখোমুখি হয় ইমমুভেবল অবজেক্টের, তখন এ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
সিলেটে নেমে আসা এই ‘প্যারাডক্সে’ শেষমেশ শেষ হাসি হাসে কোন দল, সে প্রশ্নের জবাবটা মিলে যেতে পারে আজই।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0