Logo

সাবেক স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমের শতকোটি টাকার সম্পদ: দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ১০ তলা, শেওড়াপাড়ায় ৬ তলা, রংপুর শহরে ৬ তলা বাড়ি, বনানীতে আলিশান ফ্ল্যাটসহ একাধিক সম্পদ তাঁর নামে রয়েছে।

বিশেষ প্রতিনিধি: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ১০ তলা, শেওড়াপাড়ায় ৬ তলা, রংপুর শহরে ৬ তলা বাড়ি, বনানীতে আলিশান ফ্ল্যাটসহ একাধিক সম্পদ তাঁর নামে রয়েছে। এসব সম্পদ ছাড়াও মালয়েশিয়া ও কানাডায়ও বাড়ি রয়েছে, যা তার দুর্নীতির অভিযোগকে আরো প্রমাণিত করছে।

এছাড়া, তার পরিবারের সদস্যদেরও ব্যাপক উপকারে সহায়তা করা হয়েছে। নিজে ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদ গড়ে তোলেন জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদ : জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কে পাঁচ কাঠা জমিতে ১০ তলা বাড়ি নির্মাণ করেন। প্রতি তলায় ৪টি ইউনিট ভাড়া দেওয়া হয়েছে, এবং বাড়িটির মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেওড়াপাড়ায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে, যেখানে সব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বনানীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৪ কোটি টাকা, যদিও এর বাস্তব মূল্য আরো বেশি হতে পারে। রংপুর শহরের পশ্চিম মুলটোল এলাকায়ও একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে, যেখানে কিছু ফ্ল্যাটে তার স্বজনরা থাকেন এবং কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, পীরগঞ্জে একটি দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং বগুড়ার সোনাতলা সদরে শ্বশুরবাড়ি এলাকায়ও একটি বাড়ি রয়েছে সাবেক এই সচিবের। এসব সম্পদ ছাড়াও তিনি মালয়েশিয়া ও কানাডায় বাড়ি গড়ে তোলেন, যা তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের একটি বড় অংশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

স্বজনদের জন্য সুযোগ-সুবিধা: জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের সদস্যরা তার দাপটে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। তার বড় ভাই মোস্তাফিজার রহমান সাজু, সুলতান মিয়া, এবং ছোট ভাই দিদারুল আলম বাবলু সহ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন চাকরি পেয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেছেন। তার ভাইয়ের ছেলে সোহেল হোসেনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবলুকে চার তলা ভবন উপহার দেন। তার চাচাতো ভাই আরিফকে পীরগঞ্জ ভূমি অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরি দেন, এবং তিনি স্থানীয় ব্যবসা শুরু করেন।

এছাড়া, তার দূরসম্পর্কের আত্মীয়রা পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা, রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এবং গোপীনাথপুর মাদ্রাসার মোহতামিমসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, যারা তার জন্য নানা তদবির করতেন।

দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার : জাহাঙ্গীর আলম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার দাপট কম ছিল না। তার অধীনে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই তার আচরণের শিকার হয়েছেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনেরও তাকে নিয়ে একাধিক অভিযোগ ছিল। তিনি মন্ত্রীর পাঠানো ফাইল পেছনে ফেলে রাখতেন এবং মন্ত্রীকে একাধিকবার ক্ষুব্ধ করেছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদ সংগ্রহ করেছেন এবং ভোগ দখলে রেখেছেন।

গ্রেপ্তার ও মামলা : মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জাহাঙ্গীর আলমকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে দুদকের আবেদনে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দখলদারি, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

Related Posts বাংলাদেশ