Logo

ঈদের আনন্দ নেই আছিয়ার পরিবারে, অঝোরে কাঁদছেন মা

৫ মার্চ বোনের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় শিশু আছিয়া।

অঝোরে কাঁদছেন আছিয়ার মা

জেলা প্রতিনিধি

মাগুরা: বেঁচে থাকলে হয়তোবা বায়না ধরতো নতুন পোশাকের জন্য। হাতে মেহেদী দিয়ে হয়তোবা খেলতে যেতো বোন ও খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে। ঈদের সকালে বাবার সঙ্গে বসে সেমাই-পায়েসের সঙ্গে খেতে চাইতো নিজের পছন্দের খিচুড়ি।

কিন্তু আজ সে নেই। মা আজ সারাদিন তাকিয়ে আছে তার কবরের দিকে। মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে বাবা ঈদের দিনে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছে ঢাকায়। বড় বোনও কান্না করছে কারণ এবার আর কারো হাতে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে না।

ঈদুল ফিতরের আনন্দে যখন সারাদেশে আনন্দ উৎসব তখন মাগুরার শ্রীপুরের জারিয়া গ্রামে এভাবেই দিন কাটছে শিশু আছিয়ার পরিবারের। তার অনুপস্থিতি শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের মাঝেই নয়, দাগ কাটছে এলাকাবাসীর মনেও।

মেয়ের কবরের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার বলেন, যে পরিবার থেকে একটা বাচ্চা এভাবে নরপিশাচদের কারণে মারা যায় সেখানে ঈদের দিন কিভাবে আনন্দ নিয়ে আসে?

তিনি বলেন, একজন মা হয়ে কিভাবে আমি ঈদের দিন আলদাভাবে কিছু ভাববো? যে পরিবার থেকে এভাবে একটা শিশু চোখের সামনেই কবরে শুয়ে থাকে সেখানে কেউ ঈদ করতে পারে কী? মেয়ে আমার খিচুড়ি খেতে ভালোবাসতো। কিন্তু এবার সেই মেয়েই নাই। এখন আমি কাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো? কে আমার কাছে খিচুড়ি খাওয়ার বায়না ধরবে?

আছিয়ার বড় বোন হামিদার ঈদটাই যেন কান্নাকে সঙ্গী করে।

তিনি বলেন, আমার ছোট বোনটা অনেক আদরের ছিল। আজ আছিয়া নেই কিন্তু তার স্মৃতিগুলো আমাদের ঈদকে করে তুলেছে বিষাদের। এর আগে চান রাতে আমি নিজে মেহেদী দিয়ে আছিয়ার দুই হাত রাঙাতাম। কিন্তু এবার কেউ আমার কাছে আসে না মেহেদী লাগানোর আবদার নিয়ে। আগে ঈদের দিন আমরা দুই বোন ঘুরতে বের হতাম। কিন্তু এবার আমার বোনটা শুয়ে আছে কবরে। আর আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু সে কোনো উত্তর দেয়।

আছিয়ার প্রতিবেশী হালিমা আক্তার জানান, গরীব পরিবারেও ঈদ আসে। কিন্তু এবার সেটাও যেনো নেই আছিয়ার পরিবারে। মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে গেছে আছিয়ার বাবা। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মা কান্না করেই যাচ্ছে। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা তার খোঁজখবর রাখলেও কোনো সান্তনা আসলে এই কষ্ট মোছার জন্য যথেষ্ট না।

উল্লেখ্য, ৫ মার্চ বোনের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় শিশু আছিয়া। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও ১৩ মার্চ সে মারা যায়। এ ঘটনায় ধর্ষক হিটু শেখকে প্রধান করে চারজনের নামে মামলা করেছেন শিশুটির মা।

এখন বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন আয়েশা আক্তার।

বলছেন, মেয়ে তো আর আমার কোলে ফিরে আসবে না। অন্তত তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের যদি শাস্তি হয় তবে আমার মেয়ের রূহটা কিছুটা শান্তি পাবে।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0