স্পোর্টস ডেস্ক

দেশের ফুটবল ভক্তদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ)। পরিত্র রমজান মাসের ইফতারির পরেই এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে আজ বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত।

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে জওয়াহেরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সুনীল ছেত্রীর দলের বিপক্ষে মাঠে নামবে হামজা, জামাল ভুঁইয়ারা।

এই ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে অর্থাৎ সেহরির পরেই ভোর ছয়টায় লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে চিরপ্রতিদ্বন্দী ব্রাজিল।

ভারত বনাম বাংলাদেশ মহারণে জিতবে কে?

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য একটাই—জয়-এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ও কোচ।

হামজা আসায় এই ম্যাচ নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা কাজে লাগাতে চান জামালরা। গত কদিনে শিলংয়ে অনুশীলন মাঠ নিয়ে নানা টানাপোড়েনকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না বাংলাদেশের কোচ-অধিনায়ক।

কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া দুজনই বলেছেন, জেতার জন্য বাংলাদশ দল তৈরি। মাঝখানে যা সমস্যা হয়েছে সেগুলো ভুলে যেতে চান তাঁরা।

হামজা আসায় কোচ বলেছেন, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল।

তবে, ‘ড্র হলে ওকে, কিন্তু জিতলে খুব ভালো’ মন্তব্য করে জামালের কথা, ‘আমরা সবাই জয়ের জন্যই এসেছি। সবাইকে তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। হামজার দলভুক্তি ইতিবাচক। কিন্তু স্থানীয়দেরও ভালো খেলতে হবে।’

হামজা বনাম ছেত্রী লড়াইটা ‘এক্সাইটিং’ হবে বলে মনে করছেন কাবরেরা।

তিনি বলেন, হামজা আসায় অবশ্যই আমাদের শক্তি বেড়েছে। সুনীলও ভালো খেলোয়াড়। তার প্রতি সম্মান আছে। ভারতের প্রতিও অনেক সম্মান আছে আমাদের।

অন্যদিকে ভারতের কোচ মানোলা মার্কেজের প্রথম কথাই হচ্ছে, ম্যাচটা ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।

বাংলাদেশ দলে হামজা থাকায় কোচ হিসেবে এই ম্যাচ চাপ অনুভব করছেন কী? সব মিলিয়ে কী ভাবছেন? ছেত্রীর ফিরে আসাকেই বা কীভাবে নিচ্ছেন? ভারত কোচ বলেন, ‘চাপ তো থাকবেই। সুনীল আসায় ভালো হয়েছে।’

কোচের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ভারতের ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্গাল। ম্যাচ নিয়ে কোচের মতো তাঁরও কথা, ‘আমাদের জিততে হবে।’ বাংলাদেশ চেনা প্রতিপক্ষ জানিয়ে যোগ করেন, ‘বস (কোচ) বলেছেন ম্যাচটা ভালো হতে পারে, খারাপও হতে পারে।’

ছেত্রীর কাছে প্রত্যাশা কী? জিঙ্গালের কথায়, ‘অবশ্যই সে আমাদের জন্য অনেক বড় প্রেরণা।‘

হামজা চৌধুরীর ম্যাচ আগে কখনো দেখেছেন কিনা, প্রশ্নটা এড়িয়ে বলেন, ‘হামজা ভালো খেলোয়াড়। সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছে। এখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ান ফুটবলের জন্যই সে ভালো। অবশ্যই সে খুব ভালো খেলোয়াড়। এমন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলতে আমার দল উজ্জীবিত হয়ে আছে। ওর মাঠে থাকা বাংলাদেশের জন্য ভালো। একটা প্রভাব হয়তো সে রাখতে পারে।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। পরিসংখ্যানেও স্পষ্টভাবে এগিয়ে ভারত।

ভারতের র‌্যাঙ্কিং ১২৬, বাংলাদেশ আছে ১৮৫তম স্থানে। হেড টু হেডেও ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে জামাল-তপুরা। দুই দলের ৩১ বারের সাক্ষাতে ১৬ ম্যাচেই জয়ী হয়েছে সুনীল ছেত্রীরা। বাংলাদেশের জয় মাত্র তিনটিতে। ড্র হয়েছে ১২টি।

ভারত বাংলাদেশের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এশিয়ান গেমসে। সেই ম্যাচে ৩-০ জিতেছিল ভারত। বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয় পায় ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। সেবার লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জেতে ২-১ গোলে। সর্বশেষ ২০০৩ সালে ঢাকায় ভারতকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।

২০১৯ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলকাতার সল্ট লেকে ভারতকে রুখে দিয়েছিল লাল-সবুজের দল।

দুই দল এখন পর্যন্ত ২৮ বার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৩টি ম্যাচে জয় পেয়েছে, ভারতের জয় ১৩টিতে, আর ১২টি ম্যাচ হয়েছে ড্র।

সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

এরপর ২২ বছর পার হয়ে গেলেও লাল-সবুজরা আর ভারতকে হারাতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর পরিসংখ্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছে।

শেষ পাঁচ লড়াইয়ের চারটি ড্র হয়েছে এবং ভারত একটিতে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে। 

সাম্প্রতিক পাঁচ ম্যাচের ফলাফল:

- ২০২১ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব: ভারত ২-০ বাংলাদেশ 

- ২০২১ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ: ভারত ১-১ বাংলাদেশ 

- ২০১৯ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব: ভারত ১-১ বাংলাদেশ 

- ২০১৪ ফিফা প্রীতি ম্যাচ: ভারত ১-১ বাংলাদেশ 

- ২০১৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ: ভারত ১-১ বাংলাদেশ

সেহেরির পরে মাঠে গড়াবে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল ম্যাচ

বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় দুইটি দল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের দুই মহারথী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল! বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৬টায় ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে দুই দল।

২০২৬ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে। ১৩ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট পেয়েছে তারা। এই গ্রুপ থেকে ছয়টি দল বিশ্বকাপে যাবে।

বাকি দলগুলোর মধ্যে চারটি দলের পক্ষে আর ২৯ পয়েন্টে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই ১ পয়েন্ট পেলেই বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত আর্জেন্টিনার। এমন সহজ সমীকরণ ব্রাজিলের বিপক্ষে ড্র করলেই মিলে যাবে। তাই মাঠে নামার আগে খুব বেশি চাপ নেই আর্জেন্টিনা।

অন্যদিকে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শুরুটা ভালো না হলেও, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাদের জন্য স্বস্তির। প্রথম ৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পাওয়া সেলেসাওরা এখন টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে।

বর্তমানে ১৩ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে তারা পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে এবং প্লে-অফ অঞ্চলের দল বলিভিয়ার চেয়ে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে। তবে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়; শেষ ৫টি অ্যাওয়ে বাছাইপর্বের ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে।

যদিও আর্জেন্টিনার হয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না মেসি-লাউতারো মার্তিনেজ-পাওলো দিবালা।

এর মাঝেই ব্রাজিলের রাফিনহা হুঙ্কার ছেড়ে বলেছে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জিততে চান তিনি, করতে চান গোল।

তবে এসব কথাকে কানে তুলতে নারাজ আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালনি। বলছেন, মাঠেই নির্ধারণ হবে ফলাফল, মুখের কথায় নয়।

তবে তারকাদের না পাওয়ার দুশ্চিন্তার চেয়েও স্কালোনিকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে শক্তিশালী ব্রাজিল।

তিনি বলেছেন, ‘ব্রাজিল তো ব্রাজিলই। তাদের দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় আছে, কয়েকজন বিশ্বসেরা। জানি, তারা ভয়ংকর প্রতিপক্ষ হবে। আমরা তাদের সম্মান করি। তাদের খেলা আমরা পর্যালোচনা করেছি। সামনের ম্যাচটা আরেকটু কঠিন হবে। এ ছাড়া আর কিছু বলার নেই, অসাধারণ এক প্রতিপক্ষ।’

ব্রাজিলের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে থাকছেন না লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ , পাওলো দিবালা। গোলরক্ষক হিসেবে আর্জেন্টিনার দায়িত্বে থাকছেন বাজপাখি খ্যাত এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ডিফেন্সে থাকছেন ওতামেন্দি, রোমেরোরা। মিডফিল্ড সামলাবেন এনজো ফার্নান্দেজ ও ম্যাক অ্যালিস্টাররা। আক্রমণভাগে থাকছেন নতুন সেনসেশন থিয়াগো আলমাদা, জুলিয়েন আলভারেজরা।

অন্যদিকে কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় পাওয়া ব্রাজিল দলও আছে ফুরফুরে মেজাজে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে ব্রাজিল কোচ ডরিভাল জুনিয়র একাদশে ছয়টি পরিবর্তন আনতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম গ্লোবো।

ব্রাজিলের কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে গোলপোস্টে ছিলেন আলিসন বেকার, বাঁ পাশের সেন্টার ব্যাক পজিশনে গ্যাব্রিয়েল মাগালাইস, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ব্রুনো গিমারেস এবং গারসন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাথায় চোট পেয়ে ব্রাজিল দল থেকে ছিটকে গেছেন আলিসন। একই ম্যাচে বাছাইপর্বে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় নিষেধাজ্ঞায় পড়েন গ্যাব্রিয়েল ও ব্রুনো এবং বাঁ ঊরুতে চোট পান গারসন। এই চার খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে গত পরশু স্কোয়াডে গোলকিপার ওয়েভরতন, ডিফেন্ডার বেরালদো, মিডফিল্ডার হোয়াও গোমেজ ও এদেরসনকে ডাকেন ডরিভাল।

কোচ ডরিভাল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের একাদশে এই চার খেলোয়াড়ের জায়গায় বেন্তো, মুরিল্লো, আন্দ্রে ও জোয়েলিসতনকে খেলাবেন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে আলিসন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় পর তার জায়গায় পোস্ট আগলেছেন আল নাসর গোলকিপার বেন্তো। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাঁকেই দেখা যাবে একাদশে। গ্যাব্রিয়েলের জায়গায় রক্ষণের বাঁ পাশে খেলবেন করিন্থিয়ান্স সেন্টার ব্যাক মুরিল্লো। মাঝ মাঠে বাঁ পাশে গিমারেসের জায়গায় উলভারহ্যাম্পটনের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আন্দ্রে এবং ডানে গারসনের জায়গায় নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার জোয়েলিনতন খেলবেন।

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ব্রাজিলের একাদশে পরিবর্তন আছে আরও দুটি। কলম্বিয়ার বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামা ফ্লামেঙ্গো রাইটব্যাক ওয়েসলি ফ্রাঙ্কা ও ম্যানচেস্টার সিটি উইঙ্গার সাভিনিওকে একাদশে খেলাবেন ডরিভাল। ভ্যান্ডারসন ও রদ্রিগোর জায়গায় বদলি হিসেবে তাঁরা কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। ওয়েসলি মোনাকো রাইটব্যাক ভ্যান্ডারসনের জায়গাতেই একাদশের হয়ে মাঠে নামবেন কিন্তু সাভিনিও আক্রমণভাগে সঙ্গী হবেন ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোর। সে ক্ষেত্রে কলম্বিয়া ম্যাচে খেলা ব্রাইটন স্ট্রাইকার হোয়াও পেদ্রোর জায়গায় একাদশের হয়ে নামবেন সাভিনিও।

বাংলাফ্লো/বিএস